ঢাকা ১২:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বের সকল মানুষ যেন মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা, আদর্শ ও ত্যাগে উজ্জীবিত হয়ে উঠে। নাগরপুরে কবরস্থানের সৌন্দর্য বর্ধনে ধুবড়িয়া ব্রাদার্সের দৃষ্টিনন্দন উদ্যোগ  আলোচনা গণতান্ত্রিক শাসন শক্তিশালী করার উপায় নিয়ে শাহরাস্তির আতঙ্ক জাবেদ বাহিনী, মসজিদের জায়গা জবর দখল, দালালী আর মামলাবাজিতে হাতিয়েছেন ২ হাজার কোটি টাকা : রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। ময়মনসিংহ রেঞ্জের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত  গাজীপুর জেলা শাখা অন্তর্গত “শ্রীপুর উপজেলা” শাখার কমিটির অনুমোদন।  বেকারত্ব নিরসনে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের ৭ দফা প্রস্তাবনা নোয়াখালীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতবিনিময়  তবে উদ্যোগ রাজনৈতিক’ আমরা রাজনৈতিক দল নই তাহলে কি নিজেদের জালে-ই ফেঁসে গেলো ছাত্র সংঘটন!

ইসলামী সঙ্গীতের সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে শিল্পী মুফতি ইয়াসিন আরাফাত 

মোঃ আনজার শাহ, বিশেষ প্রতিনিধি। 
  • নিউজ প্রকাশের সময় : ০২:৫৪:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১ বার পড়া হয়েছে

ইসলামী সঙ্গীতের কোনো সর্বজনবিদিত সংজ্ঞা নেই। তবে সাধারণ চিন্তা অনুযায়ী আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূলের (সা) গুনগান, ইসলামী অনুশাসন, চেতনা ও মূল্যবোধআশ্রিত গানগুলোকেই ইসলামী সঙ্গীত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাংলা ভাষায় ইসলামী গানের আনুষ্ঠানিক ভিত্তি স্থাপন করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। যাই হোক, একজন সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে আমি এখন পর্যন্ত ইসলামী সঙ্গীত নিয়ে অনেকের প্রশ্ন ও দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয়েছি। মানুষের সেসব প্রশ্ন এবং বর্তমান সময়ের বিপুল প্রয়োজনকে সামনে রেখে, এ প্রবন্ধটি লিখছি। আশা করি ইসলামী গানের রচয়িতা, সুরকার, শিল্পী এবং অগণিত ভক্ত-শ্রোতা এ থেকে উপকৃত হবেন।হালাল-হারাম দ্বন্দ্বইসলামী সঙ্গীতের সর্বজনীন ও শক্তিশালী হবার পথে প্রথম বাধাটি হলো – বাদ্যযন্ত্রসহ গান হালাল নাকি হারাম, এই দ্বন্দ্বটি। অনেক শতাব্দীর প্রাচীন এই দ্বন্দ্ব আজো কোনো ফলপ্রসূ সমাধানে উপনীত হয়নি। পুরো মুসলিম বিশ্ব এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত। একদল মনে করে, বাদ্যযন্ত্রসহ ইসলামে গান করবার কোনো সুযোগ নেই। এটি স্পষ্টত হারাম এবং গর্হিত অপরাধ। তারা সূরা লুকমানের ৬ নম্বর আয়াত ও বুখারী শরীফের একটি হাদীসকে এর রেফারেন্স হিসেবে উপস্থাপন করেন। অন্য দলটি মনে করে, আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূলের (সা) শানে মানুষের জযবা বৃদ্ধি ও সুস্থ বিনোদনের লক্ষ্যে বাদ্যযন্ত্রসহ ইসলামী গান হারাম নয়। তারাও অনেক হাদীস ও নবীজীর (সা) জীবন থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন। ইমাম গাজ্জালী থেকে বর্তমান সময়ের ইউসুফ আল কারযাভী ও তারিক রমাদানের মতো সেরা মুসলিম স্কলারগণ এর পক্ষে শক্ত যুক্তি তুলে ধরেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে ইসলামী জ্ঞানের উপর বিশেষজ্ঞ বা স্কলার নই। তবে মুসলিম বিশ্বের এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবসান হওয়াটা আবশ্যক বলে মনে করি। সময়ের প্রেক্ষিতে ইসলামী জ্ঞানের সমস্ত উৎস বিবেচনায় নিয়ে এ বিষয়ে ঐক্যমত তৈরি হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ, ইসলামী সঙ্গীতের শিল্পী, সুরকার ও গীতিকারগণ এই দ্বিধার দরুন কুণ্ঠিত মনে, সংকীর্ণ চিন্তা থেকে অগ্রসর হয়ে থাকেন। এর ফলে সূচনা লগ্ন থেকেই গানটি তার জড়তা ও দুর্বলতা থেকে মুক্ত হতে পারে না। এরকম ভয়ার্ত ও শংকিত মনের উদ্ভাবন তাই আশানুরূপ সাফল্যও অর্জন করতে পারে না। দ্বিধাগ্রস্ত হৃদয়ে শিল্পগুণ সমৃদ্ধ ললিতকলার ধারাবাহিক উৎপাদন অসম্ভব।সঙ্গীত সাধনা ও প্রশিক্ষণের অভাবএটি একটি মারাত্মক রকমের সমস্যা। কারণ ইসলামী সঙ্গীত হোক আর যেকোনো সঙ্গীতই হোক, তা একটি নিরন্তর সাধনার বিষয়। বলা হয়ে থাকে – সঙ্গীত গুরুমুখী বিদ্যা। আসলেই তাই। গুরুর কাছ থেকে নিষ্ঠা সহকারে তালিম নেয়া ছাড়া সঙ্গীত শিক্ষার অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। কিন্তু বাস্তব এটাই যে, ইসলামের গানের শিল্পী, সুরকার, গীতিকাররা কেউই নিয়মবদ্ধভাবে সঙ্গীত শিক্ষা করেন না। অথচ শাস্ত্রীয় নিয়ম মেনে সুর, তাল, লয়, রাগ-রাগিনী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে গান যতটা প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে তাতে উপমহাদেশীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি পাশ্চাত্য ও বিশ্বসঙ্গীতের তালিম নেয়াটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাথে এ কারনেই অন্যসব ইসলামী গানের রচয়িতাদের এতটা পার্থক্য। নজরুল এত বেশি সঙ্গীত শিখেছিলেন যে, তার প্রয়োগ-প্রণালীতেই শিল্পগুণ ঠিকরে বেরোয়। বাকিরা তার থেকে যোজন-যোজন পেছনে। পদার্থ, রসায়ন, আইন, গণিত বা সমাজবিজ্ঞানের মতই সঙ্গীত স্বতন্ত্র্য একটি বিদ্যা, এটা বুঝতে হবে। না শিখে, না জেনে শুধু আল্লাহর দেয়া মেধার উপর ভিত্তি করে গান করাটা মোটেও উচিত নয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

ইসলামী সঙ্গীতের সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে শিল্পী মুফতি ইয়াসিন আরাফাত 

নিউজ প্রকাশের সময় : ০২:৫৪:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ইসলামী সঙ্গীতের কোনো সর্বজনবিদিত সংজ্ঞা নেই। তবে সাধারণ চিন্তা অনুযায়ী আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূলের (সা) গুনগান, ইসলামী অনুশাসন, চেতনা ও মূল্যবোধআশ্রিত গানগুলোকেই ইসলামী সঙ্গীত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাংলা ভাষায় ইসলামী গানের আনুষ্ঠানিক ভিত্তি স্থাপন করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। যাই হোক, একজন সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে আমি এখন পর্যন্ত ইসলামী সঙ্গীত নিয়ে অনেকের প্রশ্ন ও দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয়েছি। মানুষের সেসব প্রশ্ন এবং বর্তমান সময়ের বিপুল প্রয়োজনকে সামনে রেখে, এ প্রবন্ধটি লিখছি। আশা করি ইসলামী গানের রচয়িতা, সুরকার, শিল্পী এবং অগণিত ভক্ত-শ্রোতা এ থেকে উপকৃত হবেন।হালাল-হারাম দ্বন্দ্বইসলামী সঙ্গীতের সর্বজনীন ও শক্তিশালী হবার পথে প্রথম বাধাটি হলো – বাদ্যযন্ত্রসহ গান হালাল নাকি হারাম, এই দ্বন্দ্বটি। অনেক শতাব্দীর প্রাচীন এই দ্বন্দ্ব আজো কোনো ফলপ্রসূ সমাধানে উপনীত হয়নি। পুরো মুসলিম বিশ্ব এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত। একদল মনে করে, বাদ্যযন্ত্রসহ ইসলামে গান করবার কোনো সুযোগ নেই। এটি স্পষ্টত হারাম এবং গর্হিত অপরাধ। তারা সূরা লুকমানের ৬ নম্বর আয়াত ও বুখারী শরীফের একটি হাদীসকে এর রেফারেন্স হিসেবে উপস্থাপন করেন। অন্য দলটি মনে করে, আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূলের (সা) শানে মানুষের জযবা বৃদ্ধি ও সুস্থ বিনোদনের লক্ষ্যে বাদ্যযন্ত্রসহ ইসলামী গান হারাম নয়। তারাও অনেক হাদীস ও নবীজীর (সা) জীবন থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন। ইমাম গাজ্জালী থেকে বর্তমান সময়ের ইউসুফ আল কারযাভী ও তারিক রমাদানের মতো সেরা মুসলিম স্কলারগণ এর পক্ষে শক্ত যুক্তি তুলে ধরেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে ইসলামী জ্ঞানের উপর বিশেষজ্ঞ বা স্কলার নই। তবে মুসলিম বিশ্বের এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবসান হওয়াটা আবশ্যক বলে মনে করি। সময়ের প্রেক্ষিতে ইসলামী জ্ঞানের সমস্ত উৎস বিবেচনায় নিয়ে এ বিষয়ে ঐক্যমত তৈরি হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ, ইসলামী সঙ্গীতের শিল্পী, সুরকার ও গীতিকারগণ এই দ্বিধার দরুন কুণ্ঠিত মনে, সংকীর্ণ চিন্তা থেকে অগ্রসর হয়ে থাকেন। এর ফলে সূচনা লগ্ন থেকেই গানটি তার জড়তা ও দুর্বলতা থেকে মুক্ত হতে পারে না। এরকম ভয়ার্ত ও শংকিত মনের উদ্ভাবন তাই আশানুরূপ সাফল্যও অর্জন করতে পারে না। দ্বিধাগ্রস্ত হৃদয়ে শিল্পগুণ সমৃদ্ধ ললিতকলার ধারাবাহিক উৎপাদন অসম্ভব।সঙ্গীত সাধনা ও প্রশিক্ষণের অভাবএটি একটি মারাত্মক রকমের সমস্যা। কারণ ইসলামী সঙ্গীত হোক আর যেকোনো সঙ্গীতই হোক, তা একটি নিরন্তর সাধনার বিষয়। বলা হয়ে থাকে – সঙ্গীত গুরুমুখী বিদ্যা। আসলেই তাই। গুরুর কাছ থেকে নিষ্ঠা সহকারে তালিম নেয়া ছাড়া সঙ্গীত শিক্ষার অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। কিন্তু বাস্তব এটাই যে, ইসলামের গানের শিল্পী, সুরকার, গীতিকাররা কেউই নিয়মবদ্ধভাবে সঙ্গীত শিক্ষা করেন না। অথচ শাস্ত্রীয় নিয়ম মেনে সুর, তাল, লয়, রাগ-রাগিনী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে গান যতটা প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে তাতে উপমহাদেশীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি পাশ্চাত্য ও বিশ্বসঙ্গীতের তালিম নেয়াটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাথে এ কারনেই অন্যসব ইসলামী গানের রচয়িতাদের এতটা পার্থক্য। নজরুল এত বেশি সঙ্গীত শিখেছিলেন যে, তার প্রয়োগ-প্রণালীতেই শিল্পগুণ ঠিকরে বেরোয়। বাকিরা তার থেকে যোজন-যোজন পেছনে। পদার্থ, রসায়ন, আইন, গণিত বা সমাজবিজ্ঞানের মতই সঙ্গীত স্বতন্ত্র্য একটি বিদ্যা, এটা বুঝতে হবে। না শিখে, না জেনে শুধু আল্লাহর দেয়া মেধার উপর ভিত্তি করে গান করাটা মোটেও উচিত নয়।