ঢাকা ০৭:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
অর্ধাহারে-অনাহারে ১৪শ চা শ্রমিক তিন মাস ধরে বন্ধ মজুরি নতুন ভিসি ওমর ফারুক চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের  চাঁদায় নদী ভাঙন রোধের চেষ্টা কুড়িগ্রামে গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রম- নাগরপুরে ডিমের দাম বৃদ্ধি , ক্রেতাদের মাঝে অস্বস্থির ক্ষোভ  নোয়াখালীতে ফকির চাড়ুমিজি মাজারে চলছে লক্ষ লক্ষ টাকার রমরমা বাণিজ্য শেরপুরে ছাত্র অধিকার পরিষদের জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ  শ্রমিকদের সংঘর্ষ, নিহত ১ আশুলিয়ায় দুই পোশাক কারখানার  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ১২ দফা  বিশ্বের সকল মানুষ যেন মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা, আদর্শ ও ত্যাগে উজ্জীবিত হয়ে উঠে। নাগরপুরে কবরস্থানের সৌন্দর্য বর্ধনে ধুবড়িয়া ব্রাদার্সের দৃষ্টিনন্দন উদ্যোগ 

দুই যুগেও সংস্কার হয়নি কুঞ্জবিলাস কান্দুলী আশ্রয়ণ প্রকল্প

তৌহিদুর রহমান জেলা প্রতিনিধি-
  • নিউজ প্রকাশের সময় : ০৯:৩১:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০ বার পড়া হয়েছে

আর কত ছবি তুলবেন। আপনারা আসেন, ছবি তুলেন, আর চলে যান। কই আমাদের ঘর তো মেরামত হয় না। শুনেন অনেক কষ্টে এখানে থাকি। আমগোর ঘরের টিনের চালা ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। একটু বৃষ্টি এলে পোলাপানের গলা ধরে মাথায় পলিথিন কাগজ দিয়ে থাকি আমরা। ঘরে গিয়ে দেখেন, চালার টিন ধান চালনির মতো। পানি ঠেকাতে কম্বল কিনে, চালের উপর দিছি। পানি ঠেকাতে হাঁড়ি-পাতিল দিয়েও লাভ হয় না, ঘরের ভেতর হাঁটু পানি জমে।’কথাগুলো শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কান্দুলী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬ নম্বর ব্যারাকের ১০ নম্বর ঘরের বাসিন্দা মাহফুজা খাতুনের। রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এভাবে দুর্দশার কথা তুলে ধরেন তিনি।ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নে খাসজমির ওপর নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পটি দীর্ঘ দুই যুগ ধরে সংস্কার না করায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বাসিন্দারা। তারা সরকারের কাছে ঘর সংস্কার ও প্রকল্পে মাটি ভরাটের দাবি জানিয়েছেন।উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে সরকারি অর্থায়নে উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নের কান্দুলী গ্রামে ৮ দশমিক শূন্য ৮ একর খাস জমির ওপর সেনাবাহিনীর তৎকালীন ৩৭ এসটি ব্যাটালিয়ন ইউনিট ‘কুঞ্জবিলাস কান্দুলী আশ্রয়ণ প্রকল্পটি’ বাস্তবায়ন করে। প্রকল্পে মসজিদ, কবরস্থান, পুকুর, সমবায় সমিতির কার্যালয়সহ টিনের তৈরি ছয়টি ব্যারাক রয়েছে। প্রতিটি ব্যারাকে দশটি করে ছোট কক্ষ রয়েছে। ওই সময় ৭ শতাংশ কৃষি ও ২ দশমিক ৫০ শতাংশ আবাসিক জমিসহ একটি ভূমিহীন পরিবারকে এসব ব্যারাকের একটি করে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পে দশটি পরিবারের জন্য যৌথভাবে চারটি শৌচাগার ও দুটি গোসলখানা নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ব্যারাকের জন্য একটি করে নলকূপ ও একটি কমিউনিটি সেন্টারও নির্মাণ করা হয়।আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, সব কয়টি ব্যারাক জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ঘরের ছাউনির টিনগুলো মরিচা পড়ে ছিদ্র হয়ে গেছে। সেগুলো বন্ধ করতে পলিথিন ও কম্বল বিছিয়ে তার ওপর ইট ও খড়ি চাপা দেওয়া হয়েছে। দরজা-জানালার কপাট ভেঙে গেছে। এসব জানালা-দরজা চটের বস্তা দিয়ে বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়া সরকারিভাবে গত দুই-তিন বছর আগে দুইটি ব্যারাকের আংশিকভাবে চালের টিনের পরিবর্তনও করেছে। দু-একজন নিজের টাকা ব্যয় করে কোনো রকমে থাকার জন্য টিনে দোচালা ঘরও দিয়েছেন।কান্দুলী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫ নম্বর ব্যারাকের ১০ নম্বর কক্ষের বাসিন্দা ইসমত আরা বিবার্তাকে বলেন, ‘বেশি বৃষ্টি হলে ঘরের মেঝেতে ও আঙিনায় পানি জমে। আর ওই পানিতে সাপের বাচ্চা ভেসে বেড়ায়। তবুও নিজের সন্তানদের বুকে নিয়ে সাপ-বিচ্ছুর ভয় নিয়েই জীবন যাপন করতে হয়। অনেক দিন ধরে আমাদের ব্যারাকের চালের উপরে একটি কড়ই গাছ হেলে পড়ে আছে। যখন-তখন গাছটি পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’কান্দুলী আশ্রয়ণ প্রকল্প সমবায় সমিতির সভাপতি আমান উল্ল্যাহ বলেন, ‘এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৬০টি পরিবার ছিল। প্রকল্পটির জরাজীর্ণ অবস্থা দেখে এবং অভাব-অনটন থাকায় অন্যত্র চলে গেছে ৩২টি পরিবার। বর্তমানে এখানে ২৮টি পরিবারের প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ খুব কষ্টে বসবাস করছে। কারণ প্রতিটি ব্যারাকের চালের টিন ছিদ্র হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। বৃষ্টির পানি ঠেকাতে হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে বসে থাকতে হয়। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে প্রকল্প এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তিনি সরকারের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘর সংস্কার ও মাটি ভরাটের দাবি জানান।’ধানশাইলের ইউপি চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সহায়-সম্বল ভূমিহীন ৬০টি পরিবারের সদস্যদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে সরকার। কিন্তু নির্মাণের দীর্ঘদিন পার হয়ে গেলেও এগুলোর সংস্কার কাজ না করায় এখন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে বরাদ্দ পেলে দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

দুই যুগেও সংস্কার হয়নি কুঞ্জবিলাস কান্দুলী আশ্রয়ণ প্রকল্প

নিউজ প্রকাশের সময় : ০৯:৩১:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আর কত ছবি তুলবেন। আপনারা আসেন, ছবি তুলেন, আর চলে যান। কই আমাদের ঘর তো মেরামত হয় না। শুনেন অনেক কষ্টে এখানে থাকি। আমগোর ঘরের টিনের চালা ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। একটু বৃষ্টি এলে পোলাপানের গলা ধরে মাথায় পলিথিন কাগজ দিয়ে থাকি আমরা। ঘরে গিয়ে দেখেন, চালার টিন ধান চালনির মতো। পানি ঠেকাতে কম্বল কিনে, চালের উপর দিছি। পানি ঠেকাতে হাঁড়ি-পাতিল দিয়েও লাভ হয় না, ঘরের ভেতর হাঁটু পানি জমে।’কথাগুলো শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কান্দুলী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬ নম্বর ব্যারাকের ১০ নম্বর ঘরের বাসিন্দা মাহফুজা খাতুনের। রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এভাবে দুর্দশার কথা তুলে ধরেন তিনি।ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নে খাসজমির ওপর নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পটি দীর্ঘ দুই যুগ ধরে সংস্কার না করায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বাসিন্দারা। তারা সরকারের কাছে ঘর সংস্কার ও প্রকল্পে মাটি ভরাটের দাবি জানিয়েছেন।উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে সরকারি অর্থায়নে উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নের কান্দুলী গ্রামে ৮ দশমিক শূন্য ৮ একর খাস জমির ওপর সেনাবাহিনীর তৎকালীন ৩৭ এসটি ব্যাটালিয়ন ইউনিট ‘কুঞ্জবিলাস কান্দুলী আশ্রয়ণ প্রকল্পটি’ বাস্তবায়ন করে। প্রকল্পে মসজিদ, কবরস্থান, পুকুর, সমবায় সমিতির কার্যালয়সহ টিনের তৈরি ছয়টি ব্যারাক রয়েছে। প্রতিটি ব্যারাকে দশটি করে ছোট কক্ষ রয়েছে। ওই সময় ৭ শতাংশ কৃষি ও ২ দশমিক ৫০ শতাংশ আবাসিক জমিসহ একটি ভূমিহীন পরিবারকে এসব ব্যারাকের একটি করে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পে দশটি পরিবারের জন্য যৌথভাবে চারটি শৌচাগার ও দুটি গোসলখানা নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ব্যারাকের জন্য একটি করে নলকূপ ও একটি কমিউনিটি সেন্টারও নির্মাণ করা হয়।আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, সব কয়টি ব্যারাক জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ঘরের ছাউনির টিনগুলো মরিচা পড়ে ছিদ্র হয়ে গেছে। সেগুলো বন্ধ করতে পলিথিন ও কম্বল বিছিয়ে তার ওপর ইট ও খড়ি চাপা দেওয়া হয়েছে। দরজা-জানালার কপাট ভেঙে গেছে। এসব জানালা-দরজা চটের বস্তা দিয়ে বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়া সরকারিভাবে গত দুই-তিন বছর আগে দুইটি ব্যারাকের আংশিকভাবে চালের টিনের পরিবর্তনও করেছে। দু-একজন নিজের টাকা ব্যয় করে কোনো রকমে থাকার জন্য টিনে দোচালা ঘরও দিয়েছেন।কান্দুলী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫ নম্বর ব্যারাকের ১০ নম্বর কক্ষের বাসিন্দা ইসমত আরা বিবার্তাকে বলেন, ‘বেশি বৃষ্টি হলে ঘরের মেঝেতে ও আঙিনায় পানি জমে। আর ওই পানিতে সাপের বাচ্চা ভেসে বেড়ায়। তবুও নিজের সন্তানদের বুকে নিয়ে সাপ-বিচ্ছুর ভয় নিয়েই জীবন যাপন করতে হয়। অনেক দিন ধরে আমাদের ব্যারাকের চালের উপরে একটি কড়ই গাছ হেলে পড়ে আছে। যখন-তখন গাছটি পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’কান্দুলী আশ্রয়ণ প্রকল্প সমবায় সমিতির সভাপতি আমান উল্ল্যাহ বলেন, ‘এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৬০টি পরিবার ছিল। প্রকল্পটির জরাজীর্ণ অবস্থা দেখে এবং অভাব-অনটন থাকায় অন্যত্র চলে গেছে ৩২টি পরিবার। বর্তমানে এখানে ২৮টি পরিবারের প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ খুব কষ্টে বসবাস করছে। কারণ প্রতিটি ব্যারাকের চালের টিন ছিদ্র হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। বৃষ্টির পানি ঠেকাতে হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে বসে থাকতে হয়। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে প্রকল্প এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তিনি সরকারের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘর সংস্কার ও মাটি ভরাটের দাবি জানান।’ধানশাইলের ইউপি চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সহায়-সম্বল ভূমিহীন ৬০টি পরিবারের সদস্যদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে সরকার। কিন্তু নির্মাণের দীর্ঘদিন পার হয়ে গেলেও এগুলোর সংস্কার কাজ না করায় এখন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে বরাদ্দ পেলে দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।