ঢাকা ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বের সকল মানুষ যেন মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা, আদর্শ ও ত্যাগে উজ্জীবিত হয়ে উঠে। নাগরপুরে কবরস্থানের সৌন্দর্য বর্ধনে ধুবড়িয়া ব্রাদার্সের দৃষ্টিনন্দন উদ্যোগ  আলোচনা গণতান্ত্রিক শাসন শক্তিশালী করার উপায় নিয়ে শাহরাস্তির আতঙ্ক জাবেদ বাহিনী, মসজিদের জায়গা জবর দখল, দালালী আর মামলাবাজিতে হাতিয়েছেন ২ হাজার কোটি টাকা : রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। ময়মনসিংহ রেঞ্জের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত  গাজীপুর জেলা শাখা অন্তর্গত “শ্রীপুর উপজেলা” শাখার কমিটির অনুমোদন।  বেকারত্ব নিরসনে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের ৭ দফা প্রস্তাবনা নোয়াখালীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতবিনিময়  তবে উদ্যোগ রাজনৈতিক’ আমরা রাজনৈতিক দল নই তাহলে কি নিজেদের জালে-ই ফেঁসে গেলো ছাত্র সংঘটন!

বাবাকে ছাড়া তৃতীয় ঈদ!

শেখ শাহাউর রহমান বেলাল::
  • নিউজ প্রকাশের সময় : ০৮:১৪:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৩ ৪৯৬ বার পড়া হয়েছে

প্রতিটি সংসারে একটি করে বটবৃক্ষ রয়েছে। যিনি দিনরাত সংসারের সুখশান্তির জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করেন। তিনি হলেন আমাদের জন্মদাতা পিতা। যাকে বাবা বলে থাকি। প্রতিটি সন্তানের কাছেই তার বাবাই হচ্ছে সবচেয়ে সেরা বাবা। বাবা বুক দিয়ে সন্তানদের আগলে রাখেন, যাতে ফুলের টোকাটিও গায়ে না লাগে। নিজে না খেয়ে সন্তানদের খাওয়ান। তবুও সন্তানকে নিজের কষ্ট বুঝতে দেন না।


শেখ শাহাউর রহমান বেলাল:: এক ভাই এক বোন এক নাতি এক নাতনিসহ সাতজন নিয়ে আমাদের একটি সুখি পরিবার। পরিবার প্রধান ছিলেন বাবা। তিনি একজন আলেম ছিলেন। পরিবারের আয় বলতে বাবার একমাত্র উপার্জন। যা দিয়ে আমাদের সংসার চলতো। ইমামতির বেতন তখন এত বেশি ছিল না। সামান্য বেতন পেতেন। তা দিয়ে সংসারের খরচ, ভাইবোনদের লেখাপড়া ঠিকঠাক বাবা চালিয়ে নিতেন। বাবা নিজে কষ্ট করলেও আমাদের কখনো বুঝতে দিতেন না। বাবা আপাদমস্তক সৎ ভালো মানুষ ছিলেন। শুধু সৎ ভালো বললে অতৃপ্তি থেকে যায়, তিনি উদার মনের দেশ প্রেমিক মানুষ ছিলেন। কোরআন সুন্নাহ ভরপুর ছিল জীবনে।

ধর্ম, বর্ণ, গোত্র সকল শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। গ্রামের ছোটবড় সবাই বাবাকে ভালোবাসতেন, সম্মান শ্রদ্ধা করতেন।

বাবা যখন ছোট তখন দাদি মারা যান। দাদির আর কোনো সন্তান ছিল না। শুধু বাবাই ছিল। দাদির মৃত্যুর পর বাবা তার মামাদের বাড়ি থেকে লেখাপড়া করেন। বাবার বড় মামি বড় মামা বাবাকে কোলে পিঠে মানুষ করেন।  পিতৃস্নেহে বড় করেছেন, তারা অনেক ভালো বাসতেন।

বাবা আজ নেই তিন বছর। জানতে ইচ্ছে করে বাবা তুমি কেমন আছ? কত দিন পেরিয়ে গেল তোমাকে দেখতে পাই না। তোমার ছবি নিয়ে এভাবে সারাজীবন আমাকে কাঁদতে হবে কে জানে। আমার প্রতিটা মুহূর্ত কাটছে তোমার জীবন্ত একটি ডাক শুনব বলে। সেই যে শেষ একটা ঝাড়ি দিলে, সেই শেষ ঝাড়িটায় আর তো কথা বললে না। বাবা তুমি সব সময় এমন কেন ছিলে? চলে যাবার ১০মিনট আগেও আমাকে ফোন করে বলেছিলে আমি খেয়েছি কিনা? অতচ আমি আসার আগেই তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে। কত কথা ছিলো তোমার সাথে। জীবেনের শেষ কথাটাও তোমার সাথে বলতে পারিনি। যাবার আগে আমাকে কিছু বলেও গেলেনা।  তোমার চলে যাওয়ার দিন মন খুলে একটু কান্নাও তো করতে দিলে না। তুমি আমাকে সারা জীবনের কান্না দিয়ে যাবে, সে জন্য মনে হয় সেদিনের কান্নায় তুমি বাঁধ সেধেছিলে। বাবা বিশ্বাস কর আমি কখনো একটি মুহূর্তের জন্যও তোমাকে ভুলে থাকিনি। বাবা তুমি ছিলে আমার ভালোবাসার সবকিছু। আমার সংগ্রাম, পথচলা, জীবনে অনেক বড় হতে চাওয়াসবকিছুর মূলেই তুমি ছিলে বাবা, শুধু তুমি।

বাবা তোমার স্বপ্নগুলো পূরণে আজ ছুটে চলেছি দেশেদেশে। আমার চোখে তোমার স্বপ্ন। আমার চোখে অধরা কত স্বপ্ন। অথচ আমার জীবন নৌকার মাঝিই যে পাড়ি দিয়েছেন অসীম পথে। একি অভিমান না নির্দয়তা বাবা। তোমার সন্তানদের এতিম বানিয়ে চলে গেলে। আমাদের কথা একটু ভাবলে না বাবা। কেউ জিজ্ঞাসা করলে আমি বলি আমার বাবা নেই, বুকটা ছিঁড়ে যায় বাবা। আমি যে এখনো বিশ্বাস করি না, তুমি আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গিয়েছ।

মাকে বলেছি তোমার কাপড়গুলো যেন আলনায় ঠিক করে ভাঁজ করে রাখে। মাঝে মধ্যে যেনো বাড়িতে ফিরে তোমার একটু গন্ধ আমি পাই। আমার যে আর তোমাকে জড়িয়ে ধরার সৌভাগ্য হবে না। আমি যে এমনই হতভাগ্য। কী সহজ না বাবা, আমার বুকে পাহাড়সম যন্ত্রণাকে সারা জীবনের সঙ্গী করে চুপচাপ এভাবে তুমি বিদায় নিলে।

আজ আমার দিনরাত শুধু কান্নায় এক বিশাল সমুদ্র বয়ে যাচ্ছে। স্বপ্ন দেখার বয়স না পেরোতেই আমার জীবন স্বপ্ন ভেঙে চুরমার। বাবা সত্যি একটা কথা কি জানো, তোমাকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকাটা শুধুই সান্ত্বনার। আমার স্বপ্নগুলো আর স্বপ্ন নেই, ফিকে হয়েছে বহু আগেই। তুমি চলে যাওয়ার পর থেকে তোমার স্মৃতিগুলো আমাকে একটি দিনের জন্যও স্বাভাবিক থাকতে দেয়নি। আমি কখনো স্বাভাবিক হতে পারব না বাবা।

বছরগুরে রমজান আসে রমজান যায়, ঈদে আসে ঈদ যায়। গেল দুইা বছর তোমাকে ইফতার করতে পারিনা। ঈদের নামাজ পড়তে পারিনা। এই রমজানে তুমি পরপারে। কতবার মনে পড়েছে রমজানে, তোমার সঙ্গে কবে ইফতার করেছি। তুমি থাকলে ফোন করে কী কী জিজ্ঞাসা করতাম? রমজান আসলে প্রতি রাতে আমাকে ফোন দিতে। কতদিন আমাকে সাহরিতে জাগিয়ে দিতে। কিন্তু কী হতভাগ্য তোমার ছেলে, সারা জীবনেও কি আর সে তোমার সঙ্গে একবার ইফতার করার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে?

মনে আছে বাবা, তুমি প্রত্যেকটা ঈদের কেনাকাটার টাকা দেওয়ার পরও কিছু টাকা আমাকে লুকিয়ে দিতে, যেন মা না দেখতে পায়? কেন এমন করতে বাবা, কেন আমাকে এত ভালোবাসতে? আমাকে ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়ার একটু সুযোগও দিলে না। আমি যে আমার পুরো জীবনটাকেই তোমার জন্য উৎসর্গ করে দিতাম। আমার সবকিছুর মূলে তুমিই ছিলে বাবা, শুধু তুমি।

তোমাকে কত দিন না দেখতে পারার কান্না, তোমাকে ছাড়া একা একা তৃতীয় ঈদ পালন করার। বিশ্বাস করো বাবা, ঈদের দিন সারা দিন কেঁদেছি। তারপরও আশায় বুক বাঁধেছি হয়তো তোমার সঙ্গে ঈদ করবো। কিন্তু সে সুযোগ আমার আর সারা জীবনেও আসবে না। হায় নিয়তি আমার।

তোমাকে ছাড়া প্রতিটা ঈদ যেন আমার নিরানন্দে যায়। তোমার ভালোবাসা খুঁজে বেড়ায় প্রতিটা ঈদে। আমার পাশের যারা আত্মীয়স্বজন আছে,ঈদে কত আনন্দ করে। সে আনন্দটা আমি করতে পারিনা বাবা। যখন আনন্দ করতে চাই, যখন মন খোলে হাসতে চাই, তখন তোমার কথা বার বার মনে হয়। তোমাকে অনেক ভালোবাসি বলতে পারিনি , তুমিও তো আমাকে অনেক ভালোবেসেছো।

তুমি আমাদের জন্য নিজের জীবনটা বিসর্জন দিয়েছ। ঠিক ভাবে খাওয়াদাওয়া করতে না, সব সময় আমাদের চিন্তা করতে। তোমার জন্য কিছু করতে পারিনি বাবা, এখনো মনে হলে খুব কান্না আসে। তোমাকে ছাড়া কিভাবে আমার ঈদ আনন্দের হয়, তুমিই ছিলে আমার খুব কাছের একটি বন্ধু।

যাদের বাবা পৃথিবীতে বেঁচে আছে তাদের এইদিনটি কতইনা আনন্দের,আর যাদের বাবা পৃথিবী থেকে চলে গেছে তাদের জন্য এই দিনটি কতইনা বেদনার তা বলে বুঝানো যাবে না। হয়তো আমার মতোই তারা তাদের বাবার অভাবটা প্রতিটা পদে পদে বুঝতে পারছে। বাবা হল একটি বট গাছ যার ছায়া তলে সন্তানের নিরাপদ স্থান।

মনে পড়ে বাবা দোকানে গিয়ে ছোটবেলায় আমার সব আবদারগুলো তুমি পূরণ করতে। আমার যা ইচ্ছে হতো কিনে দিতে। রাতে বাড়ি ফিরে আমি যখন ঘুমিয়ে পড়তাম আমার বিছানার পাশে আমার পছন্দের জিনিসগুলো কিনে এনে রাখতে। আমি ছোটবেলায় তোমাকে ছাড়া ঘুমাতাম না। এমন অনেক রাত তুমি দেরি করে ফিরেছ বলে, আম্মুর সঙ্গে আমিও অপেক্ষা করেছিবাবা এলে ঘুমাব। আমি এখনো তোমার পথ চেয়ে থাকি বাবা। রাতে আমি ঘুমাতে পারি না। তুমি নেই, কথা একটি দুঃস্বপ্নের মতো হারিয়ে বিলীন হয়ে যাক। আমি আবারও তোমার আঙুল ধরে হাঁটতে চাই বাবা।

একটিবার ফিরে আসো বাবা, মানুষদের বলে দাও, আমি পিতৃশূন্য যুবক নই, আমারও মাথার ওপরে বিশাল আকাশ আছে। আমার বটবৃক্ষ বাবা আছে।

বাবা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমরা দুই ভাইবোনসহ নাতি নাতনিকে বটবৃক্ষের মতো আগলে রেখেছেন। কখনো অভাব, দুঃখ, কষ্ট অনুভব করতে দেননি। বাবা একটু রাগী ছিলেন বটে। কঠোর শাসন করতেন। তাই বলে ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল না। আজও ঈদ উদযাপন করি, সন্তানদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করি। তারপরও বাবার শূন্যতা অনুভব করি, যা কখনো পূরণ হবার নয়।

যাদের বাবা পৃথিবীতে বেঁচে আছে,হে আল্লাহ তাদের নেক হায়াত দান করুন। যাদের বাবারা আমার বাবার মতো পৃথিবী থেকে চলে গেছে, তাদের বাবাকে আল্লাহ জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুক। (আমিন)

 

শেখ শাহাউর রহমান বেলাল

সম্পাদক প্রকাশক

চেকপোস্ট

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

বাবাকে ছাড়া তৃতীয় ঈদ!

নিউজ প্রকাশের সময় : ০৮:১৪:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৩

প্রতিটি সংসারে একটি করে বটবৃক্ষ রয়েছে। যিনি দিনরাত সংসারের সুখশান্তির জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করেন। তিনি হলেন আমাদের জন্মদাতা পিতা। যাকে বাবা বলে থাকি। প্রতিটি সন্তানের কাছেই তার বাবাই হচ্ছে সবচেয়ে সেরা বাবা। বাবা বুক দিয়ে সন্তানদের আগলে রাখেন, যাতে ফুলের টোকাটিও গায়ে না লাগে। নিজে না খেয়ে সন্তানদের খাওয়ান। তবুও সন্তানকে নিজের কষ্ট বুঝতে দেন না।


শেখ শাহাউর রহমান বেলাল:: এক ভাই এক বোন এক নাতি এক নাতনিসহ সাতজন নিয়ে আমাদের একটি সুখি পরিবার। পরিবার প্রধান ছিলেন বাবা। তিনি একজন আলেম ছিলেন। পরিবারের আয় বলতে বাবার একমাত্র উপার্জন। যা দিয়ে আমাদের সংসার চলতো। ইমামতির বেতন তখন এত বেশি ছিল না। সামান্য বেতন পেতেন। তা দিয়ে সংসারের খরচ, ভাইবোনদের লেখাপড়া ঠিকঠাক বাবা চালিয়ে নিতেন। বাবা নিজে কষ্ট করলেও আমাদের কখনো বুঝতে দিতেন না। বাবা আপাদমস্তক সৎ ভালো মানুষ ছিলেন। শুধু সৎ ভালো বললে অতৃপ্তি থেকে যায়, তিনি উদার মনের দেশ প্রেমিক মানুষ ছিলেন। কোরআন সুন্নাহ ভরপুর ছিল জীবনে।

ধর্ম, বর্ণ, গোত্র সকল শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। গ্রামের ছোটবড় সবাই বাবাকে ভালোবাসতেন, সম্মান শ্রদ্ধা করতেন।

বাবা যখন ছোট তখন দাদি মারা যান। দাদির আর কোনো সন্তান ছিল না। শুধু বাবাই ছিল। দাদির মৃত্যুর পর বাবা তার মামাদের বাড়ি থেকে লেখাপড়া করেন। বাবার বড় মামি বড় মামা বাবাকে কোলে পিঠে মানুষ করেন।  পিতৃস্নেহে বড় করেছেন, তারা অনেক ভালো বাসতেন।

বাবা আজ নেই তিন বছর। জানতে ইচ্ছে করে বাবা তুমি কেমন আছ? কত দিন পেরিয়ে গেল তোমাকে দেখতে পাই না। তোমার ছবি নিয়ে এভাবে সারাজীবন আমাকে কাঁদতে হবে কে জানে। আমার প্রতিটা মুহূর্ত কাটছে তোমার জীবন্ত একটি ডাক শুনব বলে। সেই যে শেষ একটা ঝাড়ি দিলে, সেই শেষ ঝাড়িটায় আর তো কথা বললে না। বাবা তুমি সব সময় এমন কেন ছিলে? চলে যাবার ১০মিনট আগেও আমাকে ফোন করে বলেছিলে আমি খেয়েছি কিনা? অতচ আমি আসার আগেই তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে। কত কথা ছিলো তোমার সাথে। জীবেনের শেষ কথাটাও তোমার সাথে বলতে পারিনি। যাবার আগে আমাকে কিছু বলেও গেলেনা।  তোমার চলে যাওয়ার দিন মন খুলে একটু কান্নাও তো করতে দিলে না। তুমি আমাকে সারা জীবনের কান্না দিয়ে যাবে, সে জন্য মনে হয় সেদিনের কান্নায় তুমি বাঁধ সেধেছিলে। বাবা বিশ্বাস কর আমি কখনো একটি মুহূর্তের জন্যও তোমাকে ভুলে থাকিনি। বাবা তুমি ছিলে আমার ভালোবাসার সবকিছু। আমার সংগ্রাম, পথচলা, জীবনে অনেক বড় হতে চাওয়াসবকিছুর মূলেই তুমি ছিলে বাবা, শুধু তুমি।

বাবা তোমার স্বপ্নগুলো পূরণে আজ ছুটে চলেছি দেশেদেশে। আমার চোখে তোমার স্বপ্ন। আমার চোখে অধরা কত স্বপ্ন। অথচ আমার জীবন নৌকার মাঝিই যে পাড়ি দিয়েছেন অসীম পথে। একি অভিমান না নির্দয়তা বাবা। তোমার সন্তানদের এতিম বানিয়ে চলে গেলে। আমাদের কথা একটু ভাবলে না বাবা। কেউ জিজ্ঞাসা করলে আমি বলি আমার বাবা নেই, বুকটা ছিঁড়ে যায় বাবা। আমি যে এখনো বিশ্বাস করি না, তুমি আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গিয়েছ।

মাকে বলেছি তোমার কাপড়গুলো যেন আলনায় ঠিক করে ভাঁজ করে রাখে। মাঝে মধ্যে যেনো বাড়িতে ফিরে তোমার একটু গন্ধ আমি পাই। আমার যে আর তোমাকে জড়িয়ে ধরার সৌভাগ্য হবে না। আমি যে এমনই হতভাগ্য। কী সহজ না বাবা, আমার বুকে পাহাড়সম যন্ত্রণাকে সারা জীবনের সঙ্গী করে চুপচাপ এভাবে তুমি বিদায় নিলে।

আজ আমার দিনরাত শুধু কান্নায় এক বিশাল সমুদ্র বয়ে যাচ্ছে। স্বপ্ন দেখার বয়স না পেরোতেই আমার জীবন স্বপ্ন ভেঙে চুরমার। বাবা সত্যি একটা কথা কি জানো, তোমাকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকাটা শুধুই সান্ত্বনার। আমার স্বপ্নগুলো আর স্বপ্ন নেই, ফিকে হয়েছে বহু আগেই। তুমি চলে যাওয়ার পর থেকে তোমার স্মৃতিগুলো আমাকে একটি দিনের জন্যও স্বাভাবিক থাকতে দেয়নি। আমি কখনো স্বাভাবিক হতে পারব না বাবা।

বছরগুরে রমজান আসে রমজান যায়, ঈদে আসে ঈদ যায়। গেল দুইা বছর তোমাকে ইফতার করতে পারিনা। ঈদের নামাজ পড়তে পারিনা। এই রমজানে তুমি পরপারে। কতবার মনে পড়েছে রমজানে, তোমার সঙ্গে কবে ইফতার করেছি। তুমি থাকলে ফোন করে কী কী জিজ্ঞাসা করতাম? রমজান আসলে প্রতি রাতে আমাকে ফোন দিতে। কতদিন আমাকে সাহরিতে জাগিয়ে দিতে। কিন্তু কী হতভাগ্য তোমার ছেলে, সারা জীবনেও কি আর সে তোমার সঙ্গে একবার ইফতার করার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে?

মনে আছে বাবা, তুমি প্রত্যেকটা ঈদের কেনাকাটার টাকা দেওয়ার পরও কিছু টাকা আমাকে লুকিয়ে দিতে, যেন মা না দেখতে পায়? কেন এমন করতে বাবা, কেন আমাকে এত ভালোবাসতে? আমাকে ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়ার একটু সুযোগও দিলে না। আমি যে আমার পুরো জীবনটাকেই তোমার জন্য উৎসর্গ করে দিতাম। আমার সবকিছুর মূলে তুমিই ছিলে বাবা, শুধু তুমি।

তোমাকে কত দিন না দেখতে পারার কান্না, তোমাকে ছাড়া একা একা তৃতীয় ঈদ পালন করার। বিশ্বাস করো বাবা, ঈদের দিন সারা দিন কেঁদেছি। তারপরও আশায় বুক বাঁধেছি হয়তো তোমার সঙ্গে ঈদ করবো। কিন্তু সে সুযোগ আমার আর সারা জীবনেও আসবে না। হায় নিয়তি আমার।

তোমাকে ছাড়া প্রতিটা ঈদ যেন আমার নিরানন্দে যায়। তোমার ভালোবাসা খুঁজে বেড়ায় প্রতিটা ঈদে। আমার পাশের যারা আত্মীয়স্বজন আছে,ঈদে কত আনন্দ করে। সে আনন্দটা আমি করতে পারিনা বাবা। যখন আনন্দ করতে চাই, যখন মন খোলে হাসতে চাই, তখন তোমার কথা বার বার মনে হয়। তোমাকে অনেক ভালোবাসি বলতে পারিনি , তুমিও তো আমাকে অনেক ভালোবেসেছো।

তুমি আমাদের জন্য নিজের জীবনটা বিসর্জন দিয়েছ। ঠিক ভাবে খাওয়াদাওয়া করতে না, সব সময় আমাদের চিন্তা করতে। তোমার জন্য কিছু করতে পারিনি বাবা, এখনো মনে হলে খুব কান্না আসে। তোমাকে ছাড়া কিভাবে আমার ঈদ আনন্দের হয়, তুমিই ছিলে আমার খুব কাছের একটি বন্ধু।

যাদের বাবা পৃথিবীতে বেঁচে আছে তাদের এইদিনটি কতইনা আনন্দের,আর যাদের বাবা পৃথিবী থেকে চলে গেছে তাদের জন্য এই দিনটি কতইনা বেদনার তা বলে বুঝানো যাবে না। হয়তো আমার মতোই তারা তাদের বাবার অভাবটা প্রতিটা পদে পদে বুঝতে পারছে। বাবা হল একটি বট গাছ যার ছায়া তলে সন্তানের নিরাপদ স্থান।

মনে পড়ে বাবা দোকানে গিয়ে ছোটবেলায় আমার সব আবদারগুলো তুমি পূরণ করতে। আমার যা ইচ্ছে হতো কিনে দিতে। রাতে বাড়ি ফিরে আমি যখন ঘুমিয়ে পড়তাম আমার বিছানার পাশে আমার পছন্দের জিনিসগুলো কিনে এনে রাখতে। আমি ছোটবেলায় তোমাকে ছাড়া ঘুমাতাম না। এমন অনেক রাত তুমি দেরি করে ফিরেছ বলে, আম্মুর সঙ্গে আমিও অপেক্ষা করেছিবাবা এলে ঘুমাব। আমি এখনো তোমার পথ চেয়ে থাকি বাবা। রাতে আমি ঘুমাতে পারি না। তুমি নেই, কথা একটি দুঃস্বপ্নের মতো হারিয়ে বিলীন হয়ে যাক। আমি আবারও তোমার আঙুল ধরে হাঁটতে চাই বাবা।

একটিবার ফিরে আসো বাবা, মানুষদের বলে দাও, আমি পিতৃশূন্য যুবক নই, আমারও মাথার ওপরে বিশাল আকাশ আছে। আমার বটবৃক্ষ বাবা আছে।

বাবা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমরা দুই ভাইবোনসহ নাতি নাতনিকে বটবৃক্ষের মতো আগলে রেখেছেন। কখনো অভাব, দুঃখ, কষ্ট অনুভব করতে দেননি। বাবা একটু রাগী ছিলেন বটে। কঠোর শাসন করতেন। তাই বলে ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল না। আজও ঈদ উদযাপন করি, সন্তানদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করি। তারপরও বাবার শূন্যতা অনুভব করি, যা কখনো পূরণ হবার নয়।

যাদের বাবা পৃথিবীতে বেঁচে আছে,হে আল্লাহ তাদের নেক হায়াত দান করুন। যাদের বাবারা আমার বাবার মতো পৃথিবী থেকে চলে গেছে, তাদের বাবাকে আল্লাহ জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুক। (আমিন)

 

শেখ শাহাউর রহমান বেলাল

সম্পাদক প্রকাশক

চেকপোস্ট