ঢাকা ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বের সকল মানুষ যেন মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা, আদর্শ ও ত্যাগে উজ্জীবিত হয়ে উঠে। নাগরপুরে কবরস্থানের সৌন্দর্য বর্ধনে ধুবড়িয়া ব্রাদার্সের দৃষ্টিনন্দন উদ্যোগ  আলোচনা গণতান্ত্রিক শাসন শক্তিশালী করার উপায় নিয়ে শাহরাস্তির আতঙ্ক জাবেদ বাহিনী, মসজিদের জায়গা জবর দখল, দালালী আর মামলাবাজিতে হাতিয়েছেন ২ হাজার কোটি টাকা : রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। ময়মনসিংহ রেঞ্জের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত  গাজীপুর জেলা শাখা অন্তর্গত “শ্রীপুর উপজেলা” শাখার কমিটির অনুমোদন।  বেকারত্ব নিরসনে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের ৭ দফা প্রস্তাবনা নোয়াখালীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতবিনিময়  তবে উদ্যোগ রাজনৈতিক’ আমরা রাজনৈতিক দল নই তাহলে কি নিজেদের জালে-ই ফেঁসে গেলো ছাত্র সংঘটন!

সবজির বাজারমূল্য উৎপাদন খরচের ১০-১২ গুন

স্টাফ রিপোর্টার:মেহেদী হাসান
  • নিউজ প্রকাশের সময় : ০৮:৫৫:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ অক্টোবর ২০২৩ ১৯৮ বার পড়া হয়েছে

সবজির বাজারমূল্য উৎপাদন খরচের ১০-১২ গু

 

 

 

 

উৎপাদন খরচের সঙ্গে খুচরা বাজারের দামে অনেক বেশি তফাত থাকলেও কৃষকরা এর অংশীদার হতে পারছেন না। মুন্সিগঞ্জ বাজারে প্রতি কেজি শিম ১৮০ টাকায় বিক্রি হলেও কৃষক পাচ্ছেন কেবল ৮০ টাকা। ঠিক একইভাবে খুচরা বাজারে ৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া পটোল ৩০ টাকা, ৪০ টাকার পেঁপে ৭-৮ টাকা, ৬০ টাকার লাউ ৩০ টাকা ও ১২০ টাকার বেগুন কৃষক বিক্রি করছেন ৭০ টাকায়।

 

সবজি উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কৃষকরা বলছেন, খেত থেকে সবজি তুলে পাইকারিতে তারা অল্প দামে বিক্রি করেন। তবে সেটি বিভিন্ন হাত ঘুরে অনেক মূল্য বেড়ে যায়। বগুড়ার সদর উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে দেখি সব সবজির আকাশছোঁয়া দাম। কিন্তু আমরা তো এত পাচ্ছি না।’

 

আবার সবজির পাইকারি থেকে খুচরা বাজারে যেতেই দাম বাড়ে প্রায় দ্বিগুণ। পাইকারিতে প্রতি কেজি শসা ৩২-৪০ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৫০-৮০ টাকায়। ৬০ টাকার করলা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অস্বাভাবিক পরিবহন ব্যয়, রাস্তায় চাঁদাবাজি, উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বিক্রয় কেন্দ্র পর্যন্ত দফায় দফায় আড়তদারি (কমিশন) খরচসহ নানা ব্যয়ের কারণে সবজির দাম অস্বাভাবিক হচ্ছে। আবার চলতি অক্টোবরের প্রথম দুই সপ্তাহে বৃষ্টি থাকায় আগাম শীতকালীন সবজি আবাদ বিলম্বিত হয়েছে। বৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন স্থানের সবজির উৎপাদন। এতে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। আবার রাজধানীতে সবজি আনতে বিভিন্ন স্থানে বাড়তি চাঁদার কারণেও দাম বেড়ে যায় বলে তারা জানান।

 

 

বৃষ্টির কারণে সবজির উৎপাদন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু এর অজুহাতে যেভাবে দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে তা অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লান্ট প্যাথলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘চলতি ও গত মাসে দুই দফায় টানা বৃষ্টি হয়েছিল। এতে কিছু সবজির উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে সবজির দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এখন যা দাম তা অস্বাভাবিক। মূলত বৃষ্টি হলেই অস্বাভাবিক দাম বাড়িয়ে দেন মধ্যস্বত্বভোগী ও ব্যবসায়ীরা। তারা এ সময়টার জন্যই যেন অপেক্ষায় থাকেন। কৃষক কিন্তু খুব বেশি দাম পান না। উল্টো কৃষি উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় কোনো একটা ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে পথে বসে যেতে হয়।’

 

দেশে গত আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, গত সাড়ে ১১ বছরের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। সেপ্টেম্বরেও তা ছিল ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশে। বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় জীবিকা নির্বাহে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। রাজধানীর মহাখালীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মো. কবির। স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন মধ্য বাড্ডায়।‘মাসে যে বেতন পাই তার অর্ধেক চলে যায় বাসা ভাড়ায়। এরপর গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল আছে। ওষুধের খরচ আছে। বাজারে গিয়ে কী কিনব ভেবে পাই না, সবকিছুর যা দাম! সবজিও এখন কেনা যাচ্ছে না। এভাবে কতদিন চলা যায়? আমার আয় তো আর বাড়ছে না।’

 

কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘মধ্যস্বত্বভোগীরা নানা অজুহাত দেখিয়ে অতিমুনাফা করছে। কৃষক মুনাফা করতে পারছেন না। কৃষক যদি সরাসরি বাজারে বিক্রি করতে পারলে এসব সমস্যার সমাধান হতে পারে। কৃষককে দেয়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা যেমন কৃষি ঋণ, প্রণোদনা ভর্তুকি প্রকৃত কৃষকরা পাচ্ছে না। প্রভাবশালী এবং রাজনৈতিক নেতারা এগুলোতে ভাগ বসাচ্ছেন। যার ফলে কৃষকরা প্রকৃত সুবিধাভোগী হতে পারছেন না। সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের পুষ্টি ঘাটতি তৈরি হবে। সবজির যা দাম, মানুষ তো এখন সবজিও খেতে পারছে না।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

সবজির বাজারমূল্য উৎপাদন খরচের ১০-১২ গুন

নিউজ প্রকাশের সময় : ০৮:৫৫:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ অক্টোবর ২০২৩

সবজির বাজারমূল্য উৎপাদন খরচের ১০-১২ গু

 

 

 

 

উৎপাদন খরচের সঙ্গে খুচরা বাজারের দামে অনেক বেশি তফাত থাকলেও কৃষকরা এর অংশীদার হতে পারছেন না। মুন্সিগঞ্জ বাজারে প্রতি কেজি শিম ১৮০ টাকায় বিক্রি হলেও কৃষক পাচ্ছেন কেবল ৮০ টাকা। ঠিক একইভাবে খুচরা বাজারে ৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া পটোল ৩০ টাকা, ৪০ টাকার পেঁপে ৭-৮ টাকা, ৬০ টাকার লাউ ৩০ টাকা ও ১২০ টাকার বেগুন কৃষক বিক্রি করছেন ৭০ টাকায়।

 

সবজি উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কৃষকরা বলছেন, খেত থেকে সবজি তুলে পাইকারিতে তারা অল্প দামে বিক্রি করেন। তবে সেটি বিভিন্ন হাত ঘুরে অনেক মূল্য বেড়ে যায়। বগুড়ার সদর উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে দেখি সব সবজির আকাশছোঁয়া দাম। কিন্তু আমরা তো এত পাচ্ছি না।’

 

আবার সবজির পাইকারি থেকে খুচরা বাজারে যেতেই দাম বাড়ে প্রায় দ্বিগুণ। পাইকারিতে প্রতি কেজি শসা ৩২-৪০ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৫০-৮০ টাকায়। ৬০ টাকার করলা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অস্বাভাবিক পরিবহন ব্যয়, রাস্তায় চাঁদাবাজি, উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বিক্রয় কেন্দ্র পর্যন্ত দফায় দফায় আড়তদারি (কমিশন) খরচসহ নানা ব্যয়ের কারণে সবজির দাম অস্বাভাবিক হচ্ছে। আবার চলতি অক্টোবরের প্রথম দুই সপ্তাহে বৃষ্টি থাকায় আগাম শীতকালীন সবজি আবাদ বিলম্বিত হয়েছে। বৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন স্থানের সবজির উৎপাদন। এতে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। আবার রাজধানীতে সবজি আনতে বিভিন্ন স্থানে বাড়তি চাঁদার কারণেও দাম বেড়ে যায় বলে তারা জানান।

 

 

বৃষ্টির কারণে সবজির উৎপাদন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু এর অজুহাতে যেভাবে দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে তা অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লান্ট প্যাথলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘চলতি ও গত মাসে দুই দফায় টানা বৃষ্টি হয়েছিল। এতে কিছু সবজির উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে সবজির দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এখন যা দাম তা অস্বাভাবিক। মূলত বৃষ্টি হলেই অস্বাভাবিক দাম বাড়িয়ে দেন মধ্যস্বত্বভোগী ও ব্যবসায়ীরা। তারা এ সময়টার জন্যই যেন অপেক্ষায় থাকেন। কৃষক কিন্তু খুব বেশি দাম পান না। উল্টো কৃষি উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় কোনো একটা ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে পথে বসে যেতে হয়।’

 

দেশে গত আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, গত সাড়ে ১১ বছরের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। সেপ্টেম্বরেও তা ছিল ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশে। বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় জীবিকা নির্বাহে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। রাজধানীর মহাখালীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মো. কবির। স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন মধ্য বাড্ডায়।‘মাসে যে বেতন পাই তার অর্ধেক চলে যায় বাসা ভাড়ায়। এরপর গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল আছে। ওষুধের খরচ আছে। বাজারে গিয়ে কী কিনব ভেবে পাই না, সবকিছুর যা দাম! সবজিও এখন কেনা যাচ্ছে না। এভাবে কতদিন চলা যায়? আমার আয় তো আর বাড়ছে না।’

 

কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘মধ্যস্বত্বভোগীরা নানা অজুহাত দেখিয়ে অতিমুনাফা করছে। কৃষক মুনাফা করতে পারছেন না। কৃষক যদি সরাসরি বাজারে বিক্রি করতে পারলে এসব সমস্যার সমাধান হতে পারে। কৃষককে দেয়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা যেমন কৃষি ঋণ, প্রণোদনা ভর্তুকি প্রকৃত কৃষকরা পাচ্ছে না। প্রভাবশালী এবং রাজনৈতিক নেতারা এগুলোতে ভাগ বসাচ্ছেন। যার ফলে কৃষকরা প্রকৃত সুবিধাভোগী হতে পারছেন না। সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের পুষ্টি ঘাটতি তৈরি হবে। সবজির যা দাম, মানুষ তো এখন সবজিও খেতে পারছে না।’