সাভার উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ৩৩৫ একর জমিতে গোলাপসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ করা হয়। ফুল চাষ করে পরিবারগুলো টিকে থাকলেও এবার তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে গাছগুলো শুকিয়ে ফুল ফোটার আগেই ফেটে যাচ্ছে। বছরে পাঁচ মাস ফুলের চাষ করলে তাদের সারা বছর চলার মতো অবস্থা থাকে। কিন্তু এবার প্রচণ্ড খরায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফুল চাষ। এর ওপর চলতি বছর প্রথম দিকে ফুলের ভরা মৌসুমে ছত্রাকের আক্রমণে প্রায় ধ্বংস হয়ে যায় বাগানগুলো। ছত্রাকের হানার পর এখন পর্যন্ত সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেননি ফুলচাষিরা। ফুলচাষি গিয়াস জানান, তিনিসহ ফুলচাষিরা অর্থ সংকটে ভুগছেন। পরিবার নিয়ে চলা মুশকিল হয়ে পড়েছে। ফুল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার তিনি ১৩শ ফুল মাত্র ৫শ টাকায় বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, একটি গোলাপ গাছ তিন থেকে চার বছর ফুল দিয়ে থাকে। তাই জমি নষ্ট করারও উপায় সেই। সারা বছর টুকটাক করে ফুল বিক্রি হয়। কিন্তু এখন ছত্রাকের কারণে তারও আশা শেষ হয়ে গেছে। লোকসানের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ফুলচাষিদের প্রায় ১০ হাজার পরিবার।

বিরুলিয়া ইউনিয়নের শামপুরের ফুলচাষি ও গোলাপ গ্রাম ফুলচাষি সমিতির সহসভাপতি মুক্তার হোসেন বলেন, চলতি বছরের শুরুতেই ছত্রাকের কবলে পড়ে আমরা নিঃস্ব হয়েছি। আগামী মৌসুম আসতে এখনও ৪ মাস বাকি। এ সময় আমাদের পরিবার নিয়ে চলাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। আমরা সরকার থেকে কোনো সহায়তাও পাচ্ছি না। তার ওপর স্থানীয় ঋণের কিস্তি ও বিভিন্ন এনজিও থেকে উচ্চ সুদে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না চাষিরা। তিনি বলেন, আমাদের সব মিলিয়ে ১০ হাজার চাষি ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত। এই মুহূর্তে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য কিছু অনুদান প্রয়োজন যাতে আগামী ফুলের মৌসুম পর্যন্ত চলতে পারি।

স্থানীয় চাষিরা জানান, গত বছরের এ সময়ে গোলাপ ফুলে ভর্তি ছিল বাগান। এ বছর কিছুই নেই। গরমে ও অজ্ঞাত রোগের কারণে ফুল না ফুটতেই ঝরে যাচ্ছে। কীটনাশক-সার দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন তারা।

বিরুলিয়ায় ফুল বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, বাগানে ফোটেনি গোলাপ। কোথাও কোথাও গাছের পুরো অংশই কালো হয়ে রয়েছে। চাষিরা বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের লোকজন দু-একবার ঘুরে গেছেন। কিন্তু কিছুই বলছেন না। বারবার যোগাযোগ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এর আগে ২০১৭ সালেও এমন রোগ হানা দিয়েছিল গোলাপ গ্রামে। ২০২২ সালের দিকে খামারবাড়ী ও গাজীপুর এলাকা থেকে বিশেষজ্ঞ দল গ্রামের মাটি ও ছত্রাকের নমুনা নিয়ে গেলেও এ পর্যন্ত কৃষকরা কোনো সমাধান পাননি।

সাভারের ফুলচাষি সমিতির সভাপতি মো. শাহজাহান মিয়া জানান, ফুলচাষিদের বর্তমান অবস্থা ভয়াবহ। অনতিবিলম্বে সহজ শর্তে ব্যাংকগুলো ঋণ না দিলে গোলাপ ব্যবসায় ভাটা পড়তে পারে। সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহুল চন্দ্র বলেন, অত্যন্ত তাপপ্রবাহের কারণে সাভারে ফুল চাষের টেকনোলজি পরিবর্তন করতে হবে। সাভারের গোলাপ বাগান বেশ নামকরা। একে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে। বিরুলিয়ার প্রসিদ্ধ গোলাপ বাগানকে ট্যুরিজম ভিলেজ ঘোষণা করার জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পর্যটন করপোরেশনকে গত সপ্তাহে চিঠি দিয়েছি। এতে এ গ্রামগুলোতে ফুলচাষিদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ধীরে ধীরে হয়ে যাবে। সাভার উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহফুজা আহমেদ বলেন, ফুল খামারিদের বর্তমান করুণ অবস্থার কথা আমি শুনেছি। এ বিষয় আমাদের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা পরামর্শ দিচ্ছেন। আমরা শুধু পরামর্শ দিতে পারি। বিনামূল্যে সার ও মেডিসিন দেওয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই।