ঢাকা ০১:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বের সকল মানুষ যেন মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা, আদর্শ ও ত্যাগে উজ্জীবিত হয়ে উঠে। নাগরপুরে কবরস্থানের সৌন্দর্য বর্ধনে ধুবড়িয়া ব্রাদার্সের দৃষ্টিনন্দন উদ্যোগ  আলোচনা গণতান্ত্রিক শাসন শক্তিশালী করার উপায় নিয়ে শাহরাস্তির আতঙ্ক জাবেদ বাহিনী, মসজিদের জায়গা জবর দখল, দালালী আর মামলাবাজিতে হাতিয়েছেন ২ হাজার কোটি টাকা : রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। ময়মনসিংহ রেঞ্জের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত  গাজীপুর জেলা শাখা অন্তর্গত “শ্রীপুর উপজেলা” শাখার কমিটির অনুমোদন।  বেকারত্ব নিরসনে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের ৭ দফা প্রস্তাবনা নোয়াখালীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতবিনিময়  তবে উদ্যোগ রাজনৈতিক’ আমরা রাজনৈতিক দল নই তাহলে কি নিজেদের জালে-ই ফেঁসে গেলো ছাত্র সংঘটন!

দক্ষিণাঞ্চলের বোরো চাষিদের মাথায় হাত।

রিপোর্টার সৈয়দ মো:স্বাধীন
  • নিউজ প্রকাশের সময় : ০৫:২৪:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ মে ২০২৪ ৪৬ বার পড়া হয়েছে

চলতি মৌসুমে তিন একর জমিতে বোরো চাষ করেন।বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতার বাসিন্দা সুভাষ হালদার ফলনও ভালো হয়। কিন্তু ধান কাটতে গিয়ে খেয়াল করেন অধিকাংশ ধানে চিটা। সুভাষ হালদার বলেন, ফলন ভালো হলেও চিটা হওয়ায় আমার সকল স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেল। ধান বিক্রি করেই ছেলের লেখাপড়ার খরচ দিতাম। এখন টেনশন হচ্ছে কীভাবে লোকসান পুষিয়ে উঠব।সুভাষ হালদারের মতো অনেকের সুফলা ধানখেতে দুঃসংবাদ হয়ে ধরা দিয়েছে চিটা। চলতি মৌসুমে বোরো চাষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও চিটার আধিক্যের কারণে লোকসানের মুখে পড়বেন কৃষকরা। কৃষিবিদরা বলছেন, তীব্র দাবদাহের কারণে ধান পরিপক্ব হওয়ার আগেই শুকিয়ে চিটা হয়ে গেছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চিটা হয়েছে পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর, মঠবাড়িয়া, ইন্দুরকানি, বরগুনা জেলার তালতলী, বেতাগী, আমতলী, পটুয়াখালীর সদর, খেপুপাড়া, দুমকি, দশমিনা, গলাচিপা উপজেলায়, ভোলা জেলার সবগুলো উপজেলায় চিটার পরিমাণ বেড়েছে। এ ছাড়া ঝালকাঠি জেলার সদর, নলছিটি, রাজাপুর, কাউখালি উপজেলায় এবং বরিশালের সদর, উজিরপুর, বানারীপাড়া, বাবুগঞ্জ, হিজলা উপজেলায় বোরো ফলনে চিটার পরিমাণ বেশি।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, বিভাগে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৩ হাজার ৩০২ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ২ লাখ ৯ হাজার ৬৫১ হেক্টর জমিতে।এর মধ্যে বরিশালে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৩ হাজার ১৫০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৬৩ হাজার ২৫০ হেক্টর; ভোলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৩ হাজার ১০০ হেক্টর, আবাদও ৬৩ হাজার ১০০ হেক্টর; পটুয়াখালী জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৯ হাজার ৫০০ হেক্টর, আবাদ হয় ২১ হাজার ৬০০ হেক্টর; বরগুনা জেলায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয় ১০ হাজার ৫৫২ হেক্টর, আবাদ হয় ১৪ হাজার ৪১ হেক্টর; পিরোজপুর জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ হাজার হেক্টর জমি, আবাদ হয়েছে ৩৩ হাজার ৯১০ হেক্টর এবং ঝালকাঠি জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে।পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বেতমোড় ইউনিয়নের কৃষক মোতালেব হাওলাদার দেশ প্রিয় নিউজ কে বলেন, বোরো ফলন ভালো হলেও চিটার পরিমাণ বেশি। খেতের এক-তৃতীয়াংশ ধানে চিটা দেখা যাচ্ছে। আমার জমি নিচু হওয়ায় আবাদে দেরি হয়েছে। ফলন আসতে আসতে অতিরিক্ত গরমে পড়েছে। এজন্য চিটা বেড়েছে। চাষের খরচ উঠলেও আমার লাভ চিটা হয়ে গেছে।পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার চাষি ইউসুফ খলিফা বলেন, ধান পাকতে রোদ খুব উপকারী। কিন্তু এবার রোদের সঙ্গে এত বেশি গরম হয়েছে যে ধান পাকার আগে শুকিয়ে গেছে। আমি কৃষিকাজ করছি ৩০ বছরের বেশি। এবারই দেখলাম এত বেশি চিটা জমিতে।ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া ইউনিয়নের কৃষক আবু হানিফ দেশ প্রিয় নিউজ কে বলেন, কৃষি অফিস থেকে বলা হয়েছিল গরমে ধানখেতে ৩ থেকে ৫ সেন্টিমিটার পানি জমিয়ে রাখতে। ভোলা দ্বীপ জেলা হলেও এখানে চাষাবাদের পানির সংকট আছে। এজন্য অনেকেই জমিতে পানি রাখতে পারেনি। যে কারণে ধানের মোচড়া বেড়িয়েও তা চিটা হয়ে গেছে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরগুনার অতিরিক্ত পরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ এসএম বদরুল বলেন, ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বোরো খেতের জন্য উপযুক্ত। কিন্তু এর বেশি হলে অপরিপক্ব ধানগুলো শুকিয়ে চিটা হয়ে যেতে পারে। ধানের দুধ ও ক্ষীর অবস্থায় তাপমাত্রা বাড়লে শিষের ক্ষতি করে।পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম দেশ প্রিয় নিউজ কে বলেন, পটুয়াখালীতে কিছু জমিতে চিটা দেখা গেছে। তারপরও আমরা হেক্টর প্রতি সাড়ে ৬ থেকে ৭ মেট্রিক টন ধান পেয়েছি। যাদের জমির ধানে চিটা দেখা দিয়েছে তারা মেষের দিকে জমি চাষ করেছে। এজন্য অধিক তাপমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যখন থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে তখন থেকেই কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে জমি শীতল রাখতে ৫/৭ সেন্টিমিটার পানি জমিয়ে রাখার জন্য।ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওযারিসুল কবির বলেন, ভোলার বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও এই জেলায় চাষাবাদের পানির সংকট থাকায় চিটা তুলনামূলক বেশি হয়েছে। উল্লেখ্য, আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে, সারা দেশের মতো বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়েও তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে।এ ছাড়া বরিশালের জেলাগুলোতে ৩৭ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।এবার ৪৩ বছরের রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় কলাপাড়া উপজেলায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

দক্ষিণাঞ্চলের বোরো চাষিদের মাথায় হাত।

নিউজ প্রকাশের সময় : ০৫:২৪:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ মে ২০২৪

চলতি মৌসুমে তিন একর জমিতে বোরো চাষ করেন।বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতার বাসিন্দা সুভাষ হালদার ফলনও ভালো হয়। কিন্তু ধান কাটতে গিয়ে খেয়াল করেন অধিকাংশ ধানে চিটা। সুভাষ হালদার বলেন, ফলন ভালো হলেও চিটা হওয়ায় আমার সকল স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেল। ধান বিক্রি করেই ছেলের লেখাপড়ার খরচ দিতাম। এখন টেনশন হচ্ছে কীভাবে লোকসান পুষিয়ে উঠব।সুভাষ হালদারের মতো অনেকের সুফলা ধানখেতে দুঃসংবাদ হয়ে ধরা দিয়েছে চিটা। চলতি মৌসুমে বোরো চাষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও চিটার আধিক্যের কারণে লোকসানের মুখে পড়বেন কৃষকরা। কৃষিবিদরা বলছেন, তীব্র দাবদাহের কারণে ধান পরিপক্ব হওয়ার আগেই শুকিয়ে চিটা হয়ে গেছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চিটা হয়েছে পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর, মঠবাড়িয়া, ইন্দুরকানি, বরগুনা জেলার তালতলী, বেতাগী, আমতলী, পটুয়াখালীর সদর, খেপুপাড়া, দুমকি, দশমিনা, গলাচিপা উপজেলায়, ভোলা জেলার সবগুলো উপজেলায় চিটার পরিমাণ বেড়েছে। এ ছাড়া ঝালকাঠি জেলার সদর, নলছিটি, রাজাপুর, কাউখালি উপজেলায় এবং বরিশালের সদর, উজিরপুর, বানারীপাড়া, বাবুগঞ্জ, হিজলা উপজেলায় বোরো ফলনে চিটার পরিমাণ বেশি।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, বিভাগে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৩ হাজার ৩০২ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ২ লাখ ৯ হাজার ৬৫১ হেক্টর জমিতে।এর মধ্যে বরিশালে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৩ হাজার ১৫০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৬৩ হাজার ২৫০ হেক্টর; ভোলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৩ হাজার ১০০ হেক্টর, আবাদও ৬৩ হাজার ১০০ হেক্টর; পটুয়াখালী জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৯ হাজার ৫০০ হেক্টর, আবাদ হয় ২১ হাজার ৬০০ হেক্টর; বরগুনা জেলায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয় ১০ হাজার ৫৫২ হেক্টর, আবাদ হয় ১৪ হাজার ৪১ হেক্টর; পিরোজপুর জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ হাজার হেক্টর জমি, আবাদ হয়েছে ৩৩ হাজার ৯১০ হেক্টর এবং ঝালকাঠি জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে।পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বেতমোড় ইউনিয়নের কৃষক মোতালেব হাওলাদার দেশ প্রিয় নিউজ কে বলেন, বোরো ফলন ভালো হলেও চিটার পরিমাণ বেশি। খেতের এক-তৃতীয়াংশ ধানে চিটা দেখা যাচ্ছে। আমার জমি নিচু হওয়ায় আবাদে দেরি হয়েছে। ফলন আসতে আসতে অতিরিক্ত গরমে পড়েছে। এজন্য চিটা বেড়েছে। চাষের খরচ উঠলেও আমার লাভ চিটা হয়ে গেছে।পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার চাষি ইউসুফ খলিফা বলেন, ধান পাকতে রোদ খুব উপকারী। কিন্তু এবার রোদের সঙ্গে এত বেশি গরম হয়েছে যে ধান পাকার আগে শুকিয়ে গেছে। আমি কৃষিকাজ করছি ৩০ বছরের বেশি। এবারই দেখলাম এত বেশি চিটা জমিতে।ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া ইউনিয়নের কৃষক আবু হানিফ দেশ প্রিয় নিউজ কে বলেন, কৃষি অফিস থেকে বলা হয়েছিল গরমে ধানখেতে ৩ থেকে ৫ সেন্টিমিটার পানি জমিয়ে রাখতে। ভোলা দ্বীপ জেলা হলেও এখানে চাষাবাদের পানির সংকট আছে। এজন্য অনেকেই জমিতে পানি রাখতে পারেনি। যে কারণে ধানের মোচড়া বেড়িয়েও তা চিটা হয়ে গেছে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরগুনার অতিরিক্ত পরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ এসএম বদরুল বলেন, ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বোরো খেতের জন্য উপযুক্ত। কিন্তু এর বেশি হলে অপরিপক্ব ধানগুলো শুকিয়ে চিটা হয়ে যেতে পারে। ধানের দুধ ও ক্ষীর অবস্থায় তাপমাত্রা বাড়লে শিষের ক্ষতি করে।পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম দেশ প্রিয় নিউজ কে বলেন, পটুয়াখালীতে কিছু জমিতে চিটা দেখা গেছে। তারপরও আমরা হেক্টর প্রতি সাড়ে ৬ থেকে ৭ মেট্রিক টন ধান পেয়েছি। যাদের জমির ধানে চিটা দেখা দিয়েছে তারা মেষের দিকে জমি চাষ করেছে। এজন্য অধিক তাপমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যখন থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে তখন থেকেই কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে জমি শীতল রাখতে ৫/৭ সেন্টিমিটার পানি জমিয়ে রাখার জন্য।ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওযারিসুল কবির বলেন, ভোলার বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও এই জেলায় চাষাবাদের পানির সংকট থাকায় চিটা তুলনামূলক বেশি হয়েছে। উল্লেখ্য, আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে, সারা দেশের মতো বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়েও তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে।এ ছাড়া বরিশালের জেলাগুলোতে ৩৭ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।এবার ৪৩ বছরের রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় কলাপাড়া উপজেলায়।