ঢাকা ০৭:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
অর্ধাহারে-অনাহারে ১৪শ চা শ্রমিক তিন মাস ধরে বন্ধ মজুরি নতুন ভিসি ওমর ফারুক চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের  চাঁদায় নদী ভাঙন রোধের চেষ্টা কুড়িগ্রামে গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রম- নাগরপুরে ডিমের দাম বৃদ্ধি , ক্রেতাদের মাঝে অস্বস্থির ক্ষোভ  নোয়াখালীতে ফকির চাড়ুমিজি মাজারে চলছে লক্ষ লক্ষ টাকার রমরমা বাণিজ্য শেরপুরে ছাত্র অধিকার পরিষদের জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ  শ্রমিকদের সংঘর্ষ, নিহত ১ আশুলিয়ায় দুই পোশাক কারখানার  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ১২ দফা  বিশ্বের সকল মানুষ যেন মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা, আদর্শ ও ত্যাগে উজ্জীবিত হয়ে উঠে। নাগরপুরে কবরস্থানের সৌন্দর্য বর্ধনে ধুবড়িয়া ব্রাদার্সের দৃষ্টিনন্দন উদ্যোগ 

নাগরপুর হাসপাতালে জরুরি বিভাগে মিলছে না জরুরি চিকিৎসা

সিপন রানা নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি :
  • নিউজ প্রকাশের সময় : ০১:০৪:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জুন ২০২৪ ২৫ বার পড়া হয়েছে

সড়ক দুর্ঘটনায় গত সোমবার (৩ জুন) সন্ধ্যায় গুরুতর আহত হন রাজমিস্ত্রী শ্রমিক আশিক। তাকে উদ্ধার করে নাগরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। চিকিৎসা শুরুর আগে সার্জিক্যাল গজ ব্যান্ডেজ প্রয়োজন হলেও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা করতে পারেনি জরুরি বিভাগ কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও সাথে সাথে জরুরি অক্সিজেন মেলেনি এবং পালস অক্সিমিটার না থাকায় পরবর্তীতে শরীরের অক্সিজেন স্যাচুরেশন না মেপেই অক্সিজেন দেওয়া হয়। প্রায় ১০ মিনিট পর শুরু হয় চিকিৎসা, হাতে গ্লাভস বা দস্তানা না পরেই ইনফেকশনের ঝুঁকি নিয়েই চলে আঘাত প্রাপ্ত স্থানে ড্রেসিং এবং ব্যথানাশক ইনজেকশন প্রয়োগ। শরীরে স্যালাইন প্রবেশের জন্য ক্যানোলা লাগাতে হিমশিম খেতে হয় কর্তব্যরত চিকিৎসকদের। এইসব বিষয় দূর থেকেই অবলোকন করেন জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ইশরাত জাহান ইমা। শেষ পর্যন্ত ক্যানোলা লাগাতে ব্যর্থ হয় চিকিৎসকেরা। চিকিৎসা শুরুর ৫ মিনিটের মধ্যে রোগীকে তাড়াহুড়ো করে জেলা সদরে রেফার্ড (স্থানান্তর) করা হয়। এদিকে চোখের উপরে আঘাতপ্রাপ্ত স্থান থেকে অঝোরে রক্ত পড়ছে রোগীর। এভাবেই প্রায় ৪০ মিনিট স্ট্রেচারে কাতরাচ্ছেন রোগী, অপেক্ষা করা হচ্ছে স্বজনদের। গুরুতর আহত আশিকের আর্তনাদ দেখে স্থানীয় বাসিন্দা জসিউর রহমান এগিয়ে গিয়ে দায়িত্বে থাকা ডা. ইশরাত জাহান ইমা’ কে অনুরোধ করেন রক্ত প্রবাহ যেনো বন্ধ করা হয় এবং তিনি যেনো সিনিয়র ডাক্তারদের পরামর্শ নেন! ডা. ইমা দায়িত্ব পালনের চেষ্টা না করে মুঠোফোনে উল্টো বিরক্তির অভিযোগ করে বসেন থানা স্বাস্থ্য অফিসার বরাবর। পরবর্তীতে স্বজনরা এম্বুলেন্স নিয়ে রোগীকে নিতে আসলে তখন সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে হঠাৎ একজন সিনিয়র ডাক্তার চলে এসে রোগীর আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে পুনরায় ড্রেসিং করেন এবং রক্ত প্রবাহ বন্ধে তাৎক্ষণিক সেলাই করার উদ্যোগ নেন। ইতিমধ্যে সময় প্রায় ১ ঘন্টা হয়ে গেছে। হাসপাতাল রেজিস্ট্রার অনুযায়ী রোগীকে আহত অবস্থায় আনা হয় রাত ৮ টায় এবং এম্বুলেন্সে রোগী বাহির হয় ৯ টা ১০ মিনিটে। স্থানীয় এলাকার বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে, উপজেলার একমাত্র এই সরকারি হাসপাতালে মূলত প্রয়োজনীয় জরুরি চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। গুরুতর রোগীদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা না দিয়ে যত্রতত্র রেফার্ড করা হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার অভাবে জীবনের ঝুঁকিতেও পড়ছে রোগীরা। এছাড়াও হাসপাতালের আশেপাশে যত্রতত্র গড়ে উঠা ক্লিনিকের এজেন্টরা জরুরি রোগী আসলেই দল বেধে ভিড় করে জরুরি বিভাগে এবং চিকিৎসা কার্য ব্যহত করে।উল্লেখিত এমন পরিস্থিতির সময় হাসপাতালের সামনেই একটি ওষুধের দোকানে বসা ছিলেন নাগরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান খান। রোগী চলে যাওয়ার পর সাংবাদিকরা জরুরি বিভাগে তথ্য নিতে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইশরাত জাহান ইমা তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং তিনি তার নাম বলতেও অপারগতা প্রকাশ করেন। তাৎক্ষণিক উপস্থিত হয় ডা. রোকনুজ্জামান, তিনি বলেন, সাংবাদিকরা অনুমতি সাপেক্ষে তথ্য নিতে পারবেন। চিকিৎসা সেবা সঠিক ভাবেই চলছে। রোগীর স্বজনদের আসতে দেরি হওয়ায় সময় লেগেছে। যথাসময়েই সকল চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের অত্যাবশ্যকীয় কিছু সেবার কথা উল্লেখ করেছে নেদারল্যান্ডস বিজ্ঞান ভিত্তিক জার্নাল ‘এলসিভিয়ার’ – এতে বলা হয়েছে, গুরুতর আহত/অসুস্থ রোগীদের জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে একটি দক্ষ চিকিৎসক, নার্স ও সহকারীদের সমন্বিত দল থাকতে হবে। রোগীর শারীরিক অবস্থা কেমন, কতটুকু আহত এবং রোগ নির্ণয়ের জন্য থাকতে হবে কিছু ব্যবস্থা। শিশু, কার্ডিয়াক, ট্রমা, বার্ন, স্ট্রোক রোগীদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার আওতায় আনার সক্ষমতা থাকতে হবে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, সন্ত্রাসী হামলায় আহত রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হয় জরুরি বিভাগে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

নাগরপুর হাসপাতালে জরুরি বিভাগে মিলছে না জরুরি চিকিৎসা

নিউজ প্রকাশের সময় : ০১:০৪:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জুন ২০২৪

সড়ক দুর্ঘটনায় গত সোমবার (৩ জুন) সন্ধ্যায় গুরুতর আহত হন রাজমিস্ত্রী শ্রমিক আশিক। তাকে উদ্ধার করে নাগরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। চিকিৎসা শুরুর আগে সার্জিক্যাল গজ ব্যান্ডেজ প্রয়োজন হলেও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা করতে পারেনি জরুরি বিভাগ কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও সাথে সাথে জরুরি অক্সিজেন মেলেনি এবং পালস অক্সিমিটার না থাকায় পরবর্তীতে শরীরের অক্সিজেন স্যাচুরেশন না মেপেই অক্সিজেন দেওয়া হয়। প্রায় ১০ মিনিট পর শুরু হয় চিকিৎসা, হাতে গ্লাভস বা দস্তানা না পরেই ইনফেকশনের ঝুঁকি নিয়েই চলে আঘাত প্রাপ্ত স্থানে ড্রেসিং এবং ব্যথানাশক ইনজেকশন প্রয়োগ। শরীরে স্যালাইন প্রবেশের জন্য ক্যানোলা লাগাতে হিমশিম খেতে হয় কর্তব্যরত চিকিৎসকদের। এইসব বিষয় দূর থেকেই অবলোকন করেন জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ইশরাত জাহান ইমা। শেষ পর্যন্ত ক্যানোলা লাগাতে ব্যর্থ হয় চিকিৎসকেরা। চিকিৎসা শুরুর ৫ মিনিটের মধ্যে রোগীকে তাড়াহুড়ো করে জেলা সদরে রেফার্ড (স্থানান্তর) করা হয়। এদিকে চোখের উপরে আঘাতপ্রাপ্ত স্থান থেকে অঝোরে রক্ত পড়ছে রোগীর। এভাবেই প্রায় ৪০ মিনিট স্ট্রেচারে কাতরাচ্ছেন রোগী, অপেক্ষা করা হচ্ছে স্বজনদের। গুরুতর আহত আশিকের আর্তনাদ দেখে স্থানীয় বাসিন্দা জসিউর রহমান এগিয়ে গিয়ে দায়িত্বে থাকা ডা. ইশরাত জাহান ইমা’ কে অনুরোধ করেন রক্ত প্রবাহ যেনো বন্ধ করা হয় এবং তিনি যেনো সিনিয়র ডাক্তারদের পরামর্শ নেন! ডা. ইমা দায়িত্ব পালনের চেষ্টা না করে মুঠোফোনে উল্টো বিরক্তির অভিযোগ করে বসেন থানা স্বাস্থ্য অফিসার বরাবর। পরবর্তীতে স্বজনরা এম্বুলেন্স নিয়ে রোগীকে নিতে আসলে তখন সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে হঠাৎ একজন সিনিয়র ডাক্তার চলে এসে রোগীর আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে পুনরায় ড্রেসিং করেন এবং রক্ত প্রবাহ বন্ধে তাৎক্ষণিক সেলাই করার উদ্যোগ নেন। ইতিমধ্যে সময় প্রায় ১ ঘন্টা হয়ে গেছে। হাসপাতাল রেজিস্ট্রার অনুযায়ী রোগীকে আহত অবস্থায় আনা হয় রাত ৮ টায় এবং এম্বুলেন্সে রোগী বাহির হয় ৯ টা ১০ মিনিটে। স্থানীয় এলাকার বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে, উপজেলার একমাত্র এই সরকারি হাসপাতালে মূলত প্রয়োজনীয় জরুরি চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। গুরুতর রোগীদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা না দিয়ে যত্রতত্র রেফার্ড করা হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার অভাবে জীবনের ঝুঁকিতেও পড়ছে রোগীরা। এছাড়াও হাসপাতালের আশেপাশে যত্রতত্র গড়ে উঠা ক্লিনিকের এজেন্টরা জরুরি রোগী আসলেই দল বেধে ভিড় করে জরুরি বিভাগে এবং চিকিৎসা কার্য ব্যহত করে।উল্লেখিত এমন পরিস্থিতির সময় হাসপাতালের সামনেই একটি ওষুধের দোকানে বসা ছিলেন নাগরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান খান। রোগী চলে যাওয়ার পর সাংবাদিকরা জরুরি বিভাগে তথ্য নিতে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইশরাত জাহান ইমা তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং তিনি তার নাম বলতেও অপারগতা প্রকাশ করেন। তাৎক্ষণিক উপস্থিত হয় ডা. রোকনুজ্জামান, তিনি বলেন, সাংবাদিকরা অনুমতি সাপেক্ষে তথ্য নিতে পারবেন। চিকিৎসা সেবা সঠিক ভাবেই চলছে। রোগীর স্বজনদের আসতে দেরি হওয়ায় সময় লেগেছে। যথাসময়েই সকল চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের অত্যাবশ্যকীয় কিছু সেবার কথা উল্লেখ করেছে নেদারল্যান্ডস বিজ্ঞান ভিত্তিক জার্নাল ‘এলসিভিয়ার’ – এতে বলা হয়েছে, গুরুতর আহত/অসুস্থ রোগীদের জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে একটি দক্ষ চিকিৎসক, নার্স ও সহকারীদের সমন্বিত দল থাকতে হবে। রোগীর শারীরিক অবস্থা কেমন, কতটুকু আহত এবং রোগ নির্ণয়ের জন্য থাকতে হবে কিছু ব্যবস্থা। শিশু, কার্ডিয়াক, ট্রমা, বার্ন, স্ট্রোক রোগীদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার আওতায় আনার সক্ষমতা থাকতে হবে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, সন্ত্রাসী হামলায় আহত রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হয় জরুরি বিভাগে।