ঢাকা ১০:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
জেলা বিএনপি আহবায়ক এড.মান্নানের সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়। অর্ধাহারে-অনাহারে ১৪শ চা শ্রমিক তিন মাস ধরে বন্ধ মজুরি নতুন ভিসি ওমর ফারুক চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের  চাঁদায় নদী ভাঙন রোধের চেষ্টা কুড়িগ্রামে গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রম- নাগরপুরে ডিমের দাম বৃদ্ধি , ক্রেতাদের মাঝে অস্বস্থির ক্ষোভ  নোয়াখালীতে ফকির চাড়ুমিজি মাজারে চলছে লক্ষ লক্ষ টাকার রমরমা বাণিজ্য শেরপুরে ছাত্র অধিকার পরিষদের জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ  শ্রমিকদের সংঘর্ষ, নিহত ১ আশুলিয়ায় দুই পোশাক কারখানার  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ১২ দফা  বিশ্বের সকল মানুষ যেন মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা, আদর্শ ও ত্যাগে উজ্জীবিত হয়ে উঠে।

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুললেন সেন্ট্রাল কমিটির সহ-সভাপতি আখতার হোসেন। 

মেহেদী হাসান অলি (বিশেষ প্রতিনিধি)
  • নিউজ প্রকাশের সময় : ১০:৪১:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই ২০২৩ ১৬০ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুললেন সেন্ট্রাল কমিটির সহ-সভাপতি আখতার হোসেন

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে

সহ-সভাপতি আখতার হোসেন

তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন,

এক দীর্ঘ যাত্রার সমাপ্তি এবং কিছু কথাঃ

কোটা সংস্কার আন্দোলনের ভেতর দিয়ে অধিকার পরিষদের সাথে আমার যাত্রা শুরু। সেই ১৮ সালের আন্দোলনে অংশ নেয়ায় মারধর/নির্যাতনের মুখে হল থেকে বিতাড়িত হতে হয়েছিলো। মাত্র থার্ড ইয়ারে ওঠা আমাকে দীর্ঘ আড়াই মাস ঢাকায় যাযাবরের জীবন যাপন করতে হয়েছিলো। কিন্তু আমি খুশি ছিলাম ইতিহাসের অংশ হতে পেরে। আমার বন্ধুসহ রাশেদ ভাইকে ৮ এপ্রিল রাতে তার বাসায় পৌঁছে দেবার রোমাঞ্চকর স্মৃতি আমাকে আজীবন সাহসী রাখবে।

এরপর নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে কিশোরদের সাথে মেশার সুযোগ হয়েছিলো আমার।সবকিছু ছাপিয়ে প্রশ্নফাঁস বিরোধী অনশন’আমাকে নিজেকে চিনতে শিখেয়েছে। ১৮-র অক্টোবরে ঘ ইউনিটের প্রশ্নফাঁসের প্রতিবাদে রাজুতে তিনদিনের অনশনে’সবপক্ষের সম্মিলিত প্রতিবাদে, সাধারণের অংশগ্রহনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয় আবার পরীক্ষা নিতে। কলঙ্কমুক্ত হয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রতিবাদের এই পালে সবচে বড়ো হাওয়া লাগে ১৯-র ডাকসু নির্বাচনে। কতোপক্ষের ডাকাডাকি সত্ত্বেও আমি অধিকার পরিষদের ভাইদের মাঝেই সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছিলাম। সমাজসেবা সম্পাদক পদে নির্বাচিত হবার পর প্রতিবাদের মিছিল আমার সঙ্গ ছাড়েনি। ডাকসুতে থাকাকালীন শিক্ষার্থীদের জন্য এমনকি খুব ছোট ছোট বিষয়েও ছোটাছুটি আমার নেশায় পরিণত হয়। বিনিময়ও পেয়েছি। তৎকালীন ঢাবির এক ফেইসবুক প্লাটফর্মের জরিপে সর্বাধিক জনপ্রিয় ডাকসু প্রতিনিধির সম্মান আমাকে উজ্জীবিত করেছে। আমি কৃতজ্ঞ আজীবন।

১৯-এর অক্টবোরে আবরার ফাহাদের শহীদ হবার পর আন্দোলনের জোয়ারে ভেসেছিলাম আমরা। ডাকসু হামলার পর যখন আমাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে, তখন ভয়ডর উপেক্ষা করে ক্যাম্পাসে মিছিলের পর মিছিল করেছি। আমাদের এই জোয়ার ছড়িয়ে পড়েছিলো গোটা দেশে।

২০ এর প্রথমদিকে ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাবি শাখার কমিটি প্রস্ততের পুরো সময়জুড়ে জুনিয়ররা সব চেয়েছিলো আমি যেনো সভাপতি হই। তবুও আমাকে সেক্রটারি করা হলে অনেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় তখনই। কিন্তু আমি পরিষদের মধ্যে আশা দেখেছিলাম জন্য সেক্রেটারি মেনেই কাজ শুরু করি।

করোনার কঠিন সময়ে শীর্ষ নেতৃত্বের নামে মামলা হলে ঢাকায় এসে প্রতিবাদে সামিল হই। সেবছর আবরার ফাহাদের প্রথম শাহাদাত বার্ষিকীতে ৭ অক্টোবর প্রথম প্রহরে বুয়েটসংলগ্ন পলাশীর মোড়ে ‘আটস্তম্ভ’ তৈরী করেছিলাম আমরা। প্রশাসন সেটা গুড়িয়ে দেয়। তবে দেশের বিভিন্নপ্রান্তে আগ্রাসনবিরোধী ছাত্র-জনতা আটস্তম্ভের নানাবিধ রেপ্লিকা তৈরী করেছে। ধারন করেছে আবরার ফাহাদের স্মরণে নির্মিত এই প্রতীকী স্মৃতিস্তম্ভকে।

এরপর একুশের এপ্রিলে গ্রেফতার হই মোদী বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে। পুলিশ রিমান্ডে নেয় দুইবার। ৭৮ দিন পর জামিনে মুক্ত হই। পরেরবছর, ২২-এ আবার আবরার ফাহাদের স্মরণসভায় আমরা ২৪ জন আটক হই। এসব মামলার হাজিরায় বিপদের দিনের সাথীরা আমরা কোর্ট প্রাঙ্গনে একত্রিত হই প্রতিমাসে কয়েকবার। এবং সেটা যেন অনন্তকালব্যাপী আমাদের এক ঘটনাচক্রে বেঁধে ফেলেছে।

২৩ এর জানুয়ারিতে সেন্ট্রাল কমিটির সহ-সভাপতি হই। ১৭-ই ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে টিএসসিতে হামলার শিকার হই। এসব গল্প আমার একার নয়। সারাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আমাদের প্রায় সব সাথীরই এমন গল্প আছে।

সারাদেশের এইসব গল্পের সারথীরা হঠাৎ করে এক ডামাডোলে পরে যায়। গত একমাসে যা কিছু ঘটেছে তাতে হতাশা ভর করে। নতুন ধারার রাজনীতির আহ্বানে একত্রিত হওয়া মানুষগুলো সাধারণের থেকে নানাবিধ প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। যার উত্তর করাও কষ্টের।

আমি ছাত্র অধিকারের কর্মী হিসেবে সেসব বিষয়ের চেয়ে ছাত্র অধিকারের বিষয়ে আমার বক্তব্য উপস্থাপন করতেই বেশি আগ্রহী। গত ১০ জুলাই ঢাবি, জাবি, রাবি শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে লেজুড়বৃত্তির অভিযোগ আনে। সাস্ট থেকে দপ্তর বরাবর চিঠি পাঠানো হয়।

১৪ তারিখ দিনভর কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিংয়ে আমি প্রশ্ন রেখেছিলাম ছাত্রের সভাপতি, সেক্রেটারির দেয়া ২১ জুনের প্রেস রিলিজ, যুব ও শ্রমিকের সাথে দেয়া প্রেস রিলিজ কেন লেজুড়বৃত্তি হবে না। কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।

প্রশ্ন করেছিলাম গণ’র পদগ্রহন করার ব্যাপারে । উত্তরে সেক্রেটারি জানালেন এটা সাময়িক বা পদাধিকার বলে বা সম্মানসূচক বা পার্মানেন্ট নয় এমনকিছু। আমি বললাম গণ’র ঐ কমিটির শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আপনারা পদ হোল্ড করেছেন, যে প্রেসে আপনাদের পদায়িত করা হয় সেখানে সাময়িক বা সম্মানসূচক এমন কোনো লেখা ছিলো না, ঐ পদ ব্যবহার করে আপনারা গণতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন এবং সেই পদের ভিত্তিতে চাইলেই গণর প্রেসরিলিজ অনু্যায়ী আপনারা বর্তমান গণর কমিটিতে পদ নিতে পারেন তবুও কেন এই পদগ্রহন পার্মানেন্ট নয়। উত্তর মেলেনি।

এমনকি গণর খসড়া গঠনতন্ত্রেও কেবল মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বকে পদায়িত করার কথা বলা আছে। এর অর্থ হলো মেয়াদ শেষ হলে গণতে যাবেন বা গণতে গেলে মেয়াদ শেষ বা পদশূন্য হবে। আবার দ্বৈত পদের ব্যাপারও আছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ এর ৯০খ ধারা অনুযায়ী এমনকিছু আইনানুগ নয়।

সবচেয়ে জোরালা যে প্রশ্ন করছিলাম তা হলো ‘ ছাত্র অধিকার পরিষদ কি তার গঠনতন্ত্রে উল্লেখিত স্বাধীন, স্বাতন্ত্র্য, লেজুড়বৃত্তির ঘোষণায় অটল থাকবে? তখন এই গঠনতন্ত্র খসড়া, কার্যকরী নয় এমন কথা বলা হয়। এমনকি গঠনতন্ত্র সংশোধনের আলাপও দেয় দুয়েকজন।সেদিনের মিটিংয়ে ঢাবি, জাবি, রাবির সাথে ফর্মালি বসার সিদ্ধান্ত হলেও সেটা করা হয়নি।

যেসব কথা এবং কাজের ভিত্তিতে আমরা একত্রিত হয়েছিলাম, শিক্ষার্থীদের আহ্বান করেছিলাম, মানুষকে আশা দেখিয়েছিলাম তা যেন অন্তত ছাত্র অধিকার পরিষদে বিদ্যমান থাকে, আমাদের এতোদিনের পরিশ্রম যেন বিফলে না যায় এজন্য ঢাবি, জাবি, রাবি, সাস্টের উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানিয়েছিলাম। কিন্তু দিনশেষে একরাশ হতাশা ছাড়া এখানে আর কিছু অবশিষ্ট থাকলো না।

আজ

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুললেন সেন্ট্রাল কমিটির সহ-সভাপতি আখতার হোসেন। 

নিউজ প্রকাশের সময় : ১০:৪১:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই ২০২৩

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুললেন সেন্ট্রাল কমিটির সহ-সভাপতি আখতার হোসেন

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে

সহ-সভাপতি আখতার হোসেন

তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন,

এক দীর্ঘ যাত্রার সমাপ্তি এবং কিছু কথাঃ

কোটা সংস্কার আন্দোলনের ভেতর দিয়ে অধিকার পরিষদের সাথে আমার যাত্রা শুরু। সেই ১৮ সালের আন্দোলনে অংশ নেয়ায় মারধর/নির্যাতনের মুখে হল থেকে বিতাড়িত হতে হয়েছিলো। মাত্র থার্ড ইয়ারে ওঠা আমাকে দীর্ঘ আড়াই মাস ঢাকায় যাযাবরের জীবন যাপন করতে হয়েছিলো। কিন্তু আমি খুশি ছিলাম ইতিহাসের অংশ হতে পেরে। আমার বন্ধুসহ রাশেদ ভাইকে ৮ এপ্রিল রাতে তার বাসায় পৌঁছে দেবার রোমাঞ্চকর স্মৃতি আমাকে আজীবন সাহসী রাখবে।

এরপর নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে কিশোরদের সাথে মেশার সুযোগ হয়েছিলো আমার।সবকিছু ছাপিয়ে প্রশ্নফাঁস বিরোধী অনশন’আমাকে নিজেকে চিনতে শিখেয়েছে। ১৮-র অক্টোবরে ঘ ইউনিটের প্রশ্নফাঁসের প্রতিবাদে রাজুতে তিনদিনের অনশনে’সবপক্ষের সম্মিলিত প্রতিবাদে, সাধারণের অংশগ্রহনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয় আবার পরীক্ষা নিতে। কলঙ্কমুক্ত হয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রতিবাদের এই পালে সবচে বড়ো হাওয়া লাগে ১৯-র ডাকসু নির্বাচনে। কতোপক্ষের ডাকাডাকি সত্ত্বেও আমি অধিকার পরিষদের ভাইদের মাঝেই সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছিলাম। সমাজসেবা সম্পাদক পদে নির্বাচিত হবার পর প্রতিবাদের মিছিল আমার সঙ্গ ছাড়েনি। ডাকসুতে থাকাকালীন শিক্ষার্থীদের জন্য এমনকি খুব ছোট ছোট বিষয়েও ছোটাছুটি আমার নেশায় পরিণত হয়। বিনিময়ও পেয়েছি। তৎকালীন ঢাবির এক ফেইসবুক প্লাটফর্মের জরিপে সর্বাধিক জনপ্রিয় ডাকসু প্রতিনিধির সম্মান আমাকে উজ্জীবিত করেছে। আমি কৃতজ্ঞ আজীবন।

১৯-এর অক্টবোরে আবরার ফাহাদের শহীদ হবার পর আন্দোলনের জোয়ারে ভেসেছিলাম আমরা। ডাকসু হামলার পর যখন আমাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে, তখন ভয়ডর উপেক্ষা করে ক্যাম্পাসে মিছিলের পর মিছিল করেছি। আমাদের এই জোয়ার ছড়িয়ে পড়েছিলো গোটা দেশে।

২০ এর প্রথমদিকে ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাবি শাখার কমিটি প্রস্ততের পুরো সময়জুড়ে জুনিয়ররা সব চেয়েছিলো আমি যেনো সভাপতি হই। তবুও আমাকে সেক্রটারি করা হলে অনেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় তখনই। কিন্তু আমি পরিষদের মধ্যে আশা দেখেছিলাম জন্য সেক্রেটারি মেনেই কাজ শুরু করি।

করোনার কঠিন সময়ে শীর্ষ নেতৃত্বের নামে মামলা হলে ঢাকায় এসে প্রতিবাদে সামিল হই। সেবছর আবরার ফাহাদের প্রথম শাহাদাত বার্ষিকীতে ৭ অক্টোবর প্রথম প্রহরে বুয়েটসংলগ্ন পলাশীর মোড়ে ‘আটস্তম্ভ’ তৈরী করেছিলাম আমরা। প্রশাসন সেটা গুড়িয়ে দেয়। তবে দেশের বিভিন্নপ্রান্তে আগ্রাসনবিরোধী ছাত্র-জনতা আটস্তম্ভের নানাবিধ রেপ্লিকা তৈরী করেছে। ধারন করেছে আবরার ফাহাদের স্মরণে নির্মিত এই প্রতীকী স্মৃতিস্তম্ভকে।

এরপর একুশের এপ্রিলে গ্রেফতার হই মোদী বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে। পুলিশ রিমান্ডে নেয় দুইবার। ৭৮ দিন পর জামিনে মুক্ত হই। পরেরবছর, ২২-এ আবার আবরার ফাহাদের স্মরণসভায় আমরা ২৪ জন আটক হই। এসব মামলার হাজিরায় বিপদের দিনের সাথীরা আমরা কোর্ট প্রাঙ্গনে একত্রিত হই প্রতিমাসে কয়েকবার। এবং সেটা যেন অনন্তকালব্যাপী আমাদের এক ঘটনাচক্রে বেঁধে ফেলেছে।

২৩ এর জানুয়ারিতে সেন্ট্রাল কমিটির সহ-সভাপতি হই। ১৭-ই ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে টিএসসিতে হামলার শিকার হই। এসব গল্প আমার একার নয়। সারাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আমাদের প্রায় সব সাথীরই এমন গল্প আছে।

সারাদেশের এইসব গল্পের সারথীরা হঠাৎ করে এক ডামাডোলে পরে যায়। গত একমাসে যা কিছু ঘটেছে তাতে হতাশা ভর করে। নতুন ধারার রাজনীতির আহ্বানে একত্রিত হওয়া মানুষগুলো সাধারণের থেকে নানাবিধ প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। যার উত্তর করাও কষ্টের।

আমি ছাত্র অধিকারের কর্মী হিসেবে সেসব বিষয়ের চেয়ে ছাত্র অধিকারের বিষয়ে আমার বক্তব্য উপস্থাপন করতেই বেশি আগ্রহী। গত ১০ জুলাই ঢাবি, জাবি, রাবি শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে লেজুড়বৃত্তির অভিযোগ আনে। সাস্ট থেকে দপ্তর বরাবর চিঠি পাঠানো হয়।

১৪ তারিখ দিনভর কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিংয়ে আমি প্রশ্ন রেখেছিলাম ছাত্রের সভাপতি, সেক্রেটারির দেয়া ২১ জুনের প্রেস রিলিজ, যুব ও শ্রমিকের সাথে দেয়া প্রেস রিলিজ কেন লেজুড়বৃত্তি হবে না। কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।

প্রশ্ন করেছিলাম গণ’র পদগ্রহন করার ব্যাপারে । উত্তরে সেক্রেটারি জানালেন এটা সাময়িক বা পদাধিকার বলে বা সম্মানসূচক বা পার্মানেন্ট নয় এমনকিছু। আমি বললাম গণ’র ঐ কমিটির শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আপনারা পদ হোল্ড করেছেন, যে প্রেসে আপনাদের পদায়িত করা হয় সেখানে সাময়িক বা সম্মানসূচক এমন কোনো লেখা ছিলো না, ঐ পদ ব্যবহার করে আপনারা গণতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন এবং সেই পদের ভিত্তিতে চাইলেই গণর প্রেসরিলিজ অনু্যায়ী আপনারা বর্তমান গণর কমিটিতে পদ নিতে পারেন তবুও কেন এই পদগ্রহন পার্মানেন্ট নয়। উত্তর মেলেনি।

এমনকি গণর খসড়া গঠনতন্ত্রেও কেবল মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বকে পদায়িত করার কথা বলা আছে। এর অর্থ হলো মেয়াদ শেষ হলে গণতে যাবেন বা গণতে গেলে মেয়াদ শেষ বা পদশূন্য হবে। আবার দ্বৈত পদের ব্যাপারও আছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ এর ৯০খ ধারা অনুযায়ী এমনকিছু আইনানুগ নয়।

সবচেয়ে জোরালা যে প্রশ্ন করছিলাম তা হলো ‘ ছাত্র অধিকার পরিষদ কি তার গঠনতন্ত্রে উল্লেখিত স্বাধীন, স্বাতন্ত্র্য, লেজুড়বৃত্তির ঘোষণায় অটল থাকবে? তখন এই গঠনতন্ত্র খসড়া, কার্যকরী নয় এমন কথা বলা হয়। এমনকি গঠনতন্ত্র সংশোধনের আলাপও দেয় দুয়েকজন।সেদিনের মিটিংয়ে ঢাবি, জাবি, রাবির সাথে ফর্মালি বসার সিদ্ধান্ত হলেও সেটা করা হয়নি।

যেসব কথা এবং কাজের ভিত্তিতে আমরা একত্রিত হয়েছিলাম, শিক্ষার্থীদের আহ্বান করেছিলাম, মানুষকে আশা দেখিয়েছিলাম তা যেন অন্তত ছাত্র অধিকার পরিষদে বিদ্যমান থাকে, আমাদের এতোদিনের পরিশ্রম যেন বিফলে না যায় এজন্য ঢাবি, জাবি, রাবি, সাস্টের উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানিয়েছিলাম। কিন্তু দিনশেষে একরাশ হতাশা ছাড়া এখানে আর কিছু অবশিষ্ট থাকলো না।

আজ