ঢাকা ০৬:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খোলস পাল্টানো কে এই কুদরত আলী?

স্টাফ রিপোর্টার::
  • নিউজ প্রকাশের সময় : ০৬:১৮:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ১৪৯ বার পড়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার:: মাধবপুরে কলেজ ছাত্র মিশু হত্যা রহস্যের জট যেন খুলছেইনা। পাঁচমাস অতিবাহীত হলেও মামলার প্রধান আসামী শিমুল ছাড়া এখনো ১০ আসামী রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এরইমধ্যে মামলায় এজহারে থাকা ৬নং আসামী কুদরত আলী গত কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এসে রাজ স্বাক্ষী হিসেবে লিখিত ভিডিও বক্তব্য দেন প্রেসক্লাব নামে একটি সংগঠনের কাছে। তার এই ভিডিও বক্তব্য রীতিমত ভাইরাল। তার বক্তব্য নিয়ে উপজেলাজুড়ে বইছে আলোচনাসমালোচনার ঝড়। ১মাস আগেও যে কুদরত আলী শিমুল হত্যাকান্ডে তার নাম ষঢ়যন্ত্র হিসেবে লাগনো হয়েছে বলে পল্লী চিকিৎসক শাহআলম আরিফুল ইসলাম জিয়া নামে এক ব্যবসায়ীকে দোষারূপ করে পোস্ট করেছে, আজ হঠাৎ করে কুদরত আলী রাজ স্বাক্ষী হলোএর কারন বা রহস্য কি? এর আগে এই কুদরত আলী কখনো পুলিশের সোর্স, কখানো ডিবিসিআইডির সোর্স, কখনো মাদক ব্যবসায়ী আবার কখনো মাদক সম্রাট হিসেবে বিভিন্ন প্রিন্ট পত্রিকা অনলাইন পোর্টালের শিরোনাম হয়ে আবিস্কার হয়েছেন। কখনো চুরির মামলা, কখনো হত্যার চেষ্টা মামলার আসামী হয়ে আদালতেও দাঁড়িয়েছেন এই কুদরত আলী। গত বছর ওই এলাকার নুরজাহান বেগমের জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আরিফুল ইসলাম জিয়া, চারাভাঙ্গার সাব রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখক সালাহ উদ্দিন, এক্তিয়াপুর গ্রামের শাহ আলমকে নিয়ে ফেসবুকে লাইভ, মানববন্ধন, বিভিন্ন পোস্ট করে আসছিলো কুদরত আলী। এছাড়া এসব বিষয় নিয়ে স্থানীয় জাতীয় পত্রিকায় একাধিক নিউজও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু ইদানিং আবার কুদরত আলী তার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে এনাম মিয়া নুরজাহান বেগমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পোস্ট করে আসছে। তার এসব কর্মকান্ডে সমালোচনার ঝড় বইছে ওই এলাকাজুড়ে। নানা প্রশ্নে বাঁধা মানে খোলস পাল্টানো কে এই কুদরত আলী? কি তার পরিচয়?

তথ্যসুত্রে জানা যায়, কুদরত আলী উপজেলার ১১নং বাঘাসুরা ইউনিয়নের হরিতলা গ্রামের মৃত আনোয়ার আলীর ছেলে। ১০ থেকে ১৫ বছর আগে দিন মজুরের কাজ করে আরাম আয়েসে চলতো তার জীবন। চলার পথে আরিফুল ইসলাম জিয়া নামে এক ব্যবসায়ীর সাথে দেখা হলে কিছুদিন পর জিয়া কুদরত আলীকে ধর্মের সন্তান বলে স্বীকৃতি দেয়। এরপর জিয়া কুদরত আলীকে কাছে টেনে নেয়। একসময় কুদরত আলী প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের সাথে পরিচয় হলে সোর্স হিসেবে কাজ করে। কিন্তু তার পারিবারিক জমি সংক্রান্ত বিরোধ সৃষ্টি হলে গত বছর ওই এলাকার মৃত নবীর হোসেনের ছেলে মোঃ এনাম মিয়া কুদরত আলীকে কাছে টেনে নেয়। এরপর এনামের কথামত চলতে থাকে কুদরত আলী। এনাম মিয়ার বসত ঘরের ভেতরে কুদরত আলীকে একটি রুম দিয়ে আশ্রয়ও দেওয়া হয়। এনাম মিয়ার সাথে ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম জিয়ার পূর্ব বিরোধ থাকায় নুরজাহান বেগমের জমি সংক্রান্ত বিষয়ের দায়িত্ব নেয় এনাম মিয়া। আর এসবকিছুর মোকাবেলা করানো হয় কুদরত আলীকে দিয়ে। কুদরত আলী তখন তার ধর্মের পিতা আরিফুল ইসলাম জিয়ার বিরুদ্ধে এসে ফেসবুকে লাইভ, বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ পরিবেশন, মানবন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে। কিছুটা সফলও হয়েছিলো। ওই সময়ে কুদরত আলীর দাবি ছিলো আরিফুল ইসলাম জিয়া তাকে জিম্মি করে এসব কিছু করিয়েছিলো।

গত বছরের নভেম্বর মধ্যরাতে ছাতিয়াইন হাইস্কুল মাঠ থেকে ওয়াজ শুনে বাড়ি ফেরার পথে এক্তিয়ারপুর গ্রামের শাসছুল হকের পুত্র মাওলানা আসাদ আলী ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেনীর ২য় বর্ষের মেধাবী ছাত্র আতিকুল ইসলাম মিশু অতির্কত হামলায় নিহত হন, আহত হন আরও দুজন। মিশু হত্যার ১১দিন পর ১১জনকে আসামী করে মিশুর মা তাছলিমা খাতুন বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায়কুদরত আলীসহ এনামের ভাই পানাম মিয়াকেও আসামী করা হয়। এরপর থেকে কুদরত আলী পানাম মিয়া গা ঢাকা দেয়। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেনিজেকে নির্দোষ প্রমান করে একেরপর এক পোস্ট করে আসছিলো সে। পাশাপাশি আরিফুল ইসলাম জিয়া পল্লী চিকিৎসক শাহআলমের ষঢ়যন্ত্র বলে প্রচার করে। চলতি বছরের মার্চ মাসে মিশু হত্যার সুষ্ঠ তদন্ত ন্যায় বিচার চেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব আইজিপি বরাবর আবেদনও করে কুদরত আলী।

গত দিন আগে ফেসবুক লাইভে এসে মিশু হত্যার রাজ স্বাক্ষী হিসেবে এক সাংবাদিক সংগঠনকে বক্তব্য দেয় কুদরত আলী। আর এবক্তব্যটি ওই সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক তার আইডি থেকে পোস্ট করেন। পোস্ট করার সাথে সাথেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই মন্তব্য করেন ঘটনার আড়ালের রহস্য কি? কেন কুদরত আলী এনাম মিয়া নুরজাহানের বিরোধীতা করছে। দিন আগেও যে কুদরত আলী তাদের পক্ষে রাতদিন কাজ করেছে, হঠাৎ করে বিরোধ হওয়ার কারণ কি?

অনুসন্ধানে জানা যায়, নুরজাহান বেগম ২০১৬ সালে তার ২৫৮ শতক জমি কুলটেক সলিউশন লিমিটেড কোম্পানীর নিকট বিক্রি করেন কোটি ৭৫ লাখ টাকায়। কিন্তু তার দাবী অদ্যবদি পুরো টাকা সে পায়নি। তার পরিবার নিরহ থাকায় টাকা আদায়ও করতে পারছিলেন না। ওই টাকা আদায় করার দায়িত্ব নেন কুদরত আলী এনাম মিয়া। তবে প্রকাশ্যে কুদরত আলী থাকলেও আড়ালে থেকে যায় এনাম মিয়া। ওই সময় নুরজাহান বেগমের কাছ কোর্টের মাধ্যমে ওই জমির এটর্নি পাওয়ার নেয় এনাম মিয়া। অতচ ২০১৬ সালে ওই জমি কোম্পানীকে সাব কবলা দলিল করে দেয় নুরজাহান বেগম। ওই বিষয়ে আদালতে একটি মামলা হলে কুলটেক সলিউশন লিমিটেড কোম্পানীর চেয়ারম্যান আব্বাসী আদম আলীকে আসামী করা হলে তিনি কোম্পানীর মান সম্মান রক্ষার্থে নুরজাহান বেগমের সাথে ১কোটি টাকায় আপোষ করেন। আদায়কৃত১কোটি টাকার একটি অংশ এনাম কুদরত আলী পাওয়ার কথা। নুরজাহান বেগমের সাথে যেই কথা সেই কাজ। আায়কৃত কোটি টাকার একটি অংশ নুরজাহান বেগমের কাছ থেকে পায় এনাম কুদরত আলী। তবে পুরো টাকাই এনামের ডাচ বাংলা ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক হবিগঞ্জ শাখার একাউন্টে জমা রাখা হয়। কুদরত আলী মিশু হত্যা মামলায় পলাতক আসামী হলে ওই টাকার কানাকড়িও দেয়নি এনাম। পুরো টাকাই আত্মসাত করে এনাম মিয়া।

কুদরত আলী জানান, আরিফুল ইসলাম জিয়ার কাছ থেকে আমি বাড়িতে আসলে এনাম মিয়া আমার সাথে যোগাযোগ করে। আমার দুই সংসার থাকায় আমাকে বলে আমার ছোট স্ত্রীকে যেনো তার বাড়িতে নিয়ে আসি। আমি তাকে চাচা ডাকি। তার কথা বিশ্বাস করে আমি আমার ছোট স্ত্রীকে তার বাড়িতে নিয়ে আসি। তার বাড়িতে এখনো আমার ফ্রিজ, টিভি, কাঠ ইত্যাদি রয়েছে। আমার স্ত্রীকে আনার পরই সে আমার স্ত্রীকে গৃহবন্দি করে ফেলে। ঘর থেকে বের হতে দেয় না। তখন আমাকে বলে তার কথামত কাজ করার জন্য। তানা হয় আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলবে। আমি আমার স্ত্রীকে বাচাঁতে তার কথামত কাজ করি। সে সব সময় আমার সাথে একজন লোক দিয়ে রাখতো। আমি কাউকে বুঝতে দেইনি। আমাকে দিয়ে মানববন্ধন, বিভিন্ন নিউজ, লাইভসহ অনেক কিছু করিয়েছে। আমাকে সে ব্যবহার করেছে প্রতিনিয়ত।

কুদরত আলী জানান, বছরখানেক আগেও যার নুন আন্তে পান্তা ফুরাতো। হঠাৎ কোন ব্যবসা ছাড়া এত টাকা কিভাবে পেলো? নুরজাহান বেগমকে হাত করে তার টাকা দিয়ে সে তার স্ত্রীকে স্বর্ণালংকার, তার নামে থাকা একটি মামলা ৫লাখ টাকায় আপোষ, ১০ লাখ টাকা খরচ করে শশুড় বাড়িতে (নারায়ন খোলা) ঘর উত্তোলন, বাদশা গেইটের সামনে দোকান রাখা, বিভিন্ন ঋণ পরিশোধ ইত্যাদি কাজ করে। তার দাবী কুলটেক সলিউশন লিমিটেড কোম্পানীর সাথে আপোষ নামার তারিখের আগে পরে এনাম মিয়ার ব্যাংক একাউন্টের স্টেটম্যান্ট দেখলেই এর সত্যতা বেরিয়ে আসেব। কি করে এত টাকা পেলো, কি তার ব্যবসা, ওই টাকা আয়ের উৎস কি?

কুদরত আলী নিজেকে নির্দোষ দাবী করে বলেন, মিশু হত্যার সাথে আমি জড়িত নই। ওই দিন আমি আমার রুমে ঘুমে ছিলাম। আমার এবং এনামের ভাই পানাম মিয়া খলিল মিয়ার মোবাইলের কললিস্ট এবং আইএমই নাম্বার চেক করলে কল লোকেশন কললিস্ট বের হয়ে আসবে। কথোপকথনের লিস্টও চলে আসবে। থেকে মামলার অনেক রহস্য বের হয়ে আসবে। তবে পানাম মিয়া এনাম মিয়া চতুর চালাক থাকায় তারা তাদের নিজের নামে সিম ব্যবহার করে না। একেক সময় একেক জনের নামে সিম কিনে ব্যবহার করে থাকে। মিশু হত্যার ঘটনার দিন পর্যন্ত পানাম যে সিম ব্যবহার করে আসছিলো সে সিমটি তার নামে রেজিস্ট্রেশন করা নয়, এটি তার এক চাচাতো ভাইয়ের নামে। বর্তমানেও তার নামে কোন সিম রেজিস্ট্রেশন করা নয়, এটি অন্যএকজনের নামে। তবে পানাম তার শশুড় বাড়ির লোকজনের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রয়েছে। পানাম, এনাম খলিল মিয়ার পরিবারের প্রতিটি লোকের সিম নাম্বারের লোকেশন অথবা কল লিস্ট চেক করলেই অনেক তথ্য বের হয়ে আসবে বলে জানায় কুদরত আলী।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

খোলস পাল্টানো কে এই কুদরত আলী?

নিউজ প্রকাশের সময় : ০৬:১৮:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৩

স্টাফ রিপোর্টার:: মাধবপুরে কলেজ ছাত্র মিশু হত্যা রহস্যের জট যেন খুলছেইনা। পাঁচমাস অতিবাহীত হলেও মামলার প্রধান আসামী শিমুল ছাড়া এখনো ১০ আসামী রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এরইমধ্যে মামলায় এজহারে থাকা ৬নং আসামী কুদরত আলী গত কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এসে রাজ স্বাক্ষী হিসেবে লিখিত ভিডিও বক্তব্য দেন প্রেসক্লাব নামে একটি সংগঠনের কাছে। তার এই ভিডিও বক্তব্য রীতিমত ভাইরাল। তার বক্তব্য নিয়ে উপজেলাজুড়ে বইছে আলোচনাসমালোচনার ঝড়। ১মাস আগেও যে কুদরত আলী শিমুল হত্যাকান্ডে তার নাম ষঢ়যন্ত্র হিসেবে লাগনো হয়েছে বলে পল্লী চিকিৎসক শাহআলম আরিফুল ইসলাম জিয়া নামে এক ব্যবসায়ীকে দোষারূপ করে পোস্ট করেছে, আজ হঠাৎ করে কুদরত আলী রাজ স্বাক্ষী হলোএর কারন বা রহস্য কি? এর আগে এই কুদরত আলী কখনো পুলিশের সোর্স, কখানো ডিবিসিআইডির সোর্স, কখনো মাদক ব্যবসায়ী আবার কখনো মাদক সম্রাট হিসেবে বিভিন্ন প্রিন্ট পত্রিকা অনলাইন পোর্টালের শিরোনাম হয়ে আবিস্কার হয়েছেন। কখনো চুরির মামলা, কখনো হত্যার চেষ্টা মামলার আসামী হয়ে আদালতেও দাঁড়িয়েছেন এই কুদরত আলী। গত বছর ওই এলাকার নুরজাহান বেগমের জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আরিফুল ইসলাম জিয়া, চারাভাঙ্গার সাব রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখক সালাহ উদ্দিন, এক্তিয়াপুর গ্রামের শাহ আলমকে নিয়ে ফেসবুকে লাইভ, মানববন্ধন, বিভিন্ন পোস্ট করে আসছিলো কুদরত আলী। এছাড়া এসব বিষয় নিয়ে স্থানীয় জাতীয় পত্রিকায় একাধিক নিউজও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু ইদানিং আবার কুদরত আলী তার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে এনাম মিয়া নুরজাহান বেগমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পোস্ট করে আসছে। তার এসব কর্মকান্ডে সমালোচনার ঝড় বইছে ওই এলাকাজুড়ে। নানা প্রশ্নে বাঁধা মানে খোলস পাল্টানো কে এই কুদরত আলী? কি তার পরিচয়?

তথ্যসুত্রে জানা যায়, কুদরত আলী উপজেলার ১১নং বাঘাসুরা ইউনিয়নের হরিতলা গ্রামের মৃত আনোয়ার আলীর ছেলে। ১০ থেকে ১৫ বছর আগে দিন মজুরের কাজ করে আরাম আয়েসে চলতো তার জীবন। চলার পথে আরিফুল ইসলাম জিয়া নামে এক ব্যবসায়ীর সাথে দেখা হলে কিছুদিন পর জিয়া কুদরত আলীকে ধর্মের সন্তান বলে স্বীকৃতি দেয়। এরপর জিয়া কুদরত আলীকে কাছে টেনে নেয়। একসময় কুদরত আলী প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের সাথে পরিচয় হলে সোর্স হিসেবে কাজ করে। কিন্তু তার পারিবারিক জমি সংক্রান্ত বিরোধ সৃষ্টি হলে গত বছর ওই এলাকার মৃত নবীর হোসেনের ছেলে মোঃ এনাম মিয়া কুদরত আলীকে কাছে টেনে নেয়। এরপর এনামের কথামত চলতে থাকে কুদরত আলী। এনাম মিয়ার বসত ঘরের ভেতরে কুদরত আলীকে একটি রুম দিয়ে আশ্রয়ও দেওয়া হয়। এনাম মিয়ার সাথে ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম জিয়ার পূর্ব বিরোধ থাকায় নুরজাহান বেগমের জমি সংক্রান্ত বিষয়ের দায়িত্ব নেয় এনাম মিয়া। আর এসবকিছুর মোকাবেলা করানো হয় কুদরত আলীকে দিয়ে। কুদরত আলী তখন তার ধর্মের পিতা আরিফুল ইসলাম জিয়ার বিরুদ্ধে এসে ফেসবুকে লাইভ, বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ পরিবেশন, মানবন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে। কিছুটা সফলও হয়েছিলো। ওই সময়ে কুদরত আলীর দাবি ছিলো আরিফুল ইসলাম জিয়া তাকে জিম্মি করে এসব কিছু করিয়েছিলো।

গত বছরের নভেম্বর মধ্যরাতে ছাতিয়াইন হাইস্কুল মাঠ থেকে ওয়াজ শুনে বাড়ি ফেরার পথে এক্তিয়ারপুর গ্রামের শাসছুল হকের পুত্র মাওলানা আসাদ আলী ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেনীর ২য় বর্ষের মেধাবী ছাত্র আতিকুল ইসলাম মিশু অতির্কত হামলায় নিহত হন, আহত হন আরও দুজন। মিশু হত্যার ১১দিন পর ১১জনকে আসামী করে মিশুর মা তাছলিমা খাতুন বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায়কুদরত আলীসহ এনামের ভাই পানাম মিয়াকেও আসামী করা হয়। এরপর থেকে কুদরত আলী পানাম মিয়া গা ঢাকা দেয়। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেনিজেকে নির্দোষ প্রমান করে একেরপর এক পোস্ট করে আসছিলো সে। পাশাপাশি আরিফুল ইসলাম জিয়া পল্লী চিকিৎসক শাহআলমের ষঢ়যন্ত্র বলে প্রচার করে। চলতি বছরের মার্চ মাসে মিশু হত্যার সুষ্ঠ তদন্ত ন্যায় বিচার চেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব আইজিপি বরাবর আবেদনও করে কুদরত আলী।

গত দিন আগে ফেসবুক লাইভে এসে মিশু হত্যার রাজ স্বাক্ষী হিসেবে এক সাংবাদিক সংগঠনকে বক্তব্য দেয় কুদরত আলী। আর এবক্তব্যটি ওই সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক তার আইডি থেকে পোস্ট করেন। পোস্ট করার সাথে সাথেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই মন্তব্য করেন ঘটনার আড়ালের রহস্য কি? কেন কুদরত আলী এনাম মিয়া নুরজাহানের বিরোধীতা করছে। দিন আগেও যে কুদরত আলী তাদের পক্ষে রাতদিন কাজ করেছে, হঠাৎ করে বিরোধ হওয়ার কারণ কি?

অনুসন্ধানে জানা যায়, নুরজাহান বেগম ২০১৬ সালে তার ২৫৮ শতক জমি কুলটেক সলিউশন লিমিটেড কোম্পানীর নিকট বিক্রি করেন কোটি ৭৫ লাখ টাকায়। কিন্তু তার দাবী অদ্যবদি পুরো টাকা সে পায়নি। তার পরিবার নিরহ থাকায় টাকা আদায়ও করতে পারছিলেন না। ওই টাকা আদায় করার দায়িত্ব নেন কুদরত আলী এনাম মিয়া। তবে প্রকাশ্যে কুদরত আলী থাকলেও আড়ালে থেকে যায় এনাম মিয়া। ওই সময় নুরজাহান বেগমের কাছ কোর্টের মাধ্যমে ওই জমির এটর্নি পাওয়ার নেয় এনাম মিয়া। অতচ ২০১৬ সালে ওই জমি কোম্পানীকে সাব কবলা দলিল করে দেয় নুরজাহান বেগম। ওই বিষয়ে আদালতে একটি মামলা হলে কুলটেক সলিউশন লিমিটেড কোম্পানীর চেয়ারম্যান আব্বাসী আদম আলীকে আসামী করা হলে তিনি কোম্পানীর মান সম্মান রক্ষার্থে নুরজাহান বেগমের সাথে ১কোটি টাকায় আপোষ করেন। আদায়কৃত১কোটি টাকার একটি অংশ এনাম কুদরত আলী পাওয়ার কথা। নুরজাহান বেগমের সাথে যেই কথা সেই কাজ। আায়কৃত কোটি টাকার একটি অংশ নুরজাহান বেগমের কাছ থেকে পায় এনাম কুদরত আলী। তবে পুরো টাকাই এনামের ডাচ বাংলা ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক হবিগঞ্জ শাখার একাউন্টে জমা রাখা হয়। কুদরত আলী মিশু হত্যা মামলায় পলাতক আসামী হলে ওই টাকার কানাকড়িও দেয়নি এনাম। পুরো টাকাই আত্মসাত করে এনাম মিয়া।

কুদরত আলী জানান, আরিফুল ইসলাম জিয়ার কাছ থেকে আমি বাড়িতে আসলে এনাম মিয়া আমার সাথে যোগাযোগ করে। আমার দুই সংসার থাকায় আমাকে বলে আমার ছোট স্ত্রীকে যেনো তার বাড়িতে নিয়ে আসি। আমি তাকে চাচা ডাকি। তার কথা বিশ্বাস করে আমি আমার ছোট স্ত্রীকে তার বাড়িতে নিয়ে আসি। তার বাড়িতে এখনো আমার ফ্রিজ, টিভি, কাঠ ইত্যাদি রয়েছে। আমার স্ত্রীকে আনার পরই সে আমার স্ত্রীকে গৃহবন্দি করে ফেলে। ঘর থেকে বের হতে দেয় না। তখন আমাকে বলে তার কথামত কাজ করার জন্য। তানা হয় আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলবে। আমি আমার স্ত্রীকে বাচাঁতে তার কথামত কাজ করি। সে সব সময় আমার সাথে একজন লোক দিয়ে রাখতো। আমি কাউকে বুঝতে দেইনি। আমাকে দিয়ে মানববন্ধন, বিভিন্ন নিউজ, লাইভসহ অনেক কিছু করিয়েছে। আমাকে সে ব্যবহার করেছে প্রতিনিয়ত।

কুদরত আলী জানান, বছরখানেক আগেও যার নুন আন্তে পান্তা ফুরাতো। হঠাৎ কোন ব্যবসা ছাড়া এত টাকা কিভাবে পেলো? নুরজাহান বেগমকে হাত করে তার টাকা দিয়ে সে তার স্ত্রীকে স্বর্ণালংকার, তার নামে থাকা একটি মামলা ৫লাখ টাকায় আপোষ, ১০ লাখ টাকা খরচ করে শশুড় বাড়িতে (নারায়ন খোলা) ঘর উত্তোলন, বাদশা গেইটের সামনে দোকান রাখা, বিভিন্ন ঋণ পরিশোধ ইত্যাদি কাজ করে। তার দাবী কুলটেক সলিউশন লিমিটেড কোম্পানীর সাথে আপোষ নামার তারিখের আগে পরে এনাম মিয়ার ব্যাংক একাউন্টের স্টেটম্যান্ট দেখলেই এর সত্যতা বেরিয়ে আসেব। কি করে এত টাকা পেলো, কি তার ব্যবসা, ওই টাকা আয়ের উৎস কি?

কুদরত আলী নিজেকে নির্দোষ দাবী করে বলেন, মিশু হত্যার সাথে আমি জড়িত নই। ওই দিন আমি আমার রুমে ঘুমে ছিলাম। আমার এবং এনামের ভাই পানাম মিয়া খলিল মিয়ার মোবাইলের কললিস্ট এবং আইএমই নাম্বার চেক করলে কল লোকেশন কললিস্ট বের হয়ে আসবে। কথোপকথনের লিস্টও চলে আসবে। থেকে মামলার অনেক রহস্য বের হয়ে আসবে। তবে পানাম মিয়া এনাম মিয়া চতুর চালাক থাকায় তারা তাদের নিজের নামে সিম ব্যবহার করে না। একেক সময় একেক জনের নামে সিম কিনে ব্যবহার করে থাকে। মিশু হত্যার ঘটনার দিন পর্যন্ত পানাম যে সিম ব্যবহার করে আসছিলো সে সিমটি তার নামে রেজিস্ট্রেশন করা নয়, এটি তার এক চাচাতো ভাইয়ের নামে। বর্তমানেও তার নামে কোন সিম রেজিস্ট্রেশন করা নয়, এটি অন্যএকজনের নামে। তবে পানাম তার শশুড় বাড়ির লোকজনের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রয়েছে। পানাম, এনাম খলিল মিয়ার পরিবারের প্রতিটি লোকের সিম নাম্বারের লোকেশন অথবা কল লিস্ট চেক করলেই অনেক তথ্য বের হয়ে আসবে বলে জানায় কুদরত আলী।