ঢাকা ০৬:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সড়ক দুর্ঘটনায় এক পরিবারের ৪ জনের মৃত্যু ‘সুখ আর আমার কপালে সহ্য হইলো না’ 

রিপোর্টার রফিকুল ইসলাম 
  • নিউজ প্রকাশের সময় : ০৪:৩৫:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪ ২৪ বার পড়া হয়েছে

‘সুখ আর আমার কপালে সহ্য হইলো না’ ২২ বছর আগে স্বামীকে হারিয়া অনেক কষ্ট কইরা পোলাগো মানুষ করছি। এতোদিন কষ্ট করার পর কেবল সুখের মুখ দেহা ধরছেলাম। সুখ আর আমার কপালে সহ্য হইলো না। আল্লায় এইডা কি করলে, আমারে নেলে না ক্যান? আমি এই জীবনডা কেমনে কাডামু! আমার পুতেগো লগে আমার রাইত ১১টার কালেও কতা হইছে।’হবিগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই ছেলে, নাতি ও পুত্রবধূকে একসঙ্গে হারিয়ে এভাবেই আহাজারি করছিলেন মা হালিমা বেগম। দুর্ঘটনার আগের কথাগুলোই যেন বার বার মনে পড়ে যাচ্ছে তার। মানত পূরণে গিয়েছিলেন হযরত শাহজালাল( র.) এর মাজার জিয়ারত করতে, ফিরলেন লাশ হয়ে। শুক্রবার (৩ মে ) পটুয়াখালীর গলাচিপার সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামে নিহতদের বাড়িতে গিয়ে সন্তান হারানো মায়ের এমন আহাজারি দেখা যায়।এর আগে গত বুধবার (১ মে) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হরিতলা নামক এলাকায় ট্রাক-প্রাই ভেটকার মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের চারজন নিহত হন। নিহতরা হলেন- গলাচিপা সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের মৌজালী মৃধার মেজো ছেলে মো. জামাল হোসাইন (৪২), ছোট ছেলে এনামুল হক খোকন (৩৫), জামাল মৃধার স্ত্রী কামরুন নাহার (৩০) ও ছেলে কাওসার হোসাইন অনন্ত (১২)। নিহত জামাল হোসাইন ঢাকার সাভারে অবস্থিত পাইওনিয়ার গ্রুপের মেক্স কম ইন্টারন্যাশনাল বিডি লিমিটেডে ইলেকট্রিশিয়ান ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।ণ তার ছোট ভাই এনামুল হক খোকন একই এলাকার বেবিলন গ্রুপের অবনী ফ্যাশনে সিনিয়র সুইং অপারেটর পদে কর্মরত ছিলেন শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টায় প্রথমে নিহত তিন পুরুষ ও পরে সাড়ে ১০টায় কামরুন নাহারের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা পরিচালনা করেন বাড়ির মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. রবিউল হুসাইন। জানাযা শেষে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।হবিগঞ্জে নিহত পাঁচজনের চারজনই পটুয়াখালীর এক পরিবারের নিহত জামালের খালাতো ভাই ফেরদৌস বলেন, জামাল ভাই তার ছেলে কাওসারের মানত পালনে ৩০ এপ্রিল রাতে হজরত শাহজালাল (র.) এর মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সিলেটে জান। সঙ্গে ভাবি ও খোকন ভাইও ছিলেন। ১ মে সারাদিন তারা সিলেট থাকেন এবং রাতে সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। তাদের সঙ্গে রাত ১০টার পর সর্বশেষ কথা হয়। আমরা রাত ২টার দিকে দুর্ঘটনার খবর পাই।  নিহত জামাল ও খোকনের মামা মো. সোনা মিয়া বলেন, আমার ভাগিনা জামাল ও খোকন ঢাকার সাভারে চাকরি করতো। তারা খুবই ভদ্র ও শান্ত সভাবের ছিল। ওদের মৃত্যু আমার বোন স্বাভাবিকভাবে মানতে পারছে না। এই পরিবারে বর্তমানে তেমন কোনো উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। তাই আমরা সরকারের সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করছি৷গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল জানান, নিহতদের মরদেহ আজ সকালে গলাচিপা উপজেলায় এসে পৌঁছায়। ইতোমধ্যে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। নিহতদের পরিবারকে সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

সড়ক দুর্ঘটনায় এক পরিবারের ৪ জনের মৃত্যু ‘সুখ আর আমার কপালে সহ্য হইলো না’ 

নিউজ প্রকাশের সময় : ০৪:৩৫:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

‘সুখ আর আমার কপালে সহ্য হইলো না’ ২২ বছর আগে স্বামীকে হারিয়া অনেক কষ্ট কইরা পোলাগো মানুষ করছি। এতোদিন কষ্ট করার পর কেবল সুখের মুখ দেহা ধরছেলাম। সুখ আর আমার কপালে সহ্য হইলো না। আল্লায় এইডা কি করলে, আমারে নেলে না ক্যান? আমি এই জীবনডা কেমনে কাডামু! আমার পুতেগো লগে আমার রাইত ১১টার কালেও কতা হইছে।’হবিগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই ছেলে, নাতি ও পুত্রবধূকে একসঙ্গে হারিয়ে এভাবেই আহাজারি করছিলেন মা হালিমা বেগম। দুর্ঘটনার আগের কথাগুলোই যেন বার বার মনে পড়ে যাচ্ছে তার। মানত পূরণে গিয়েছিলেন হযরত শাহজালাল( র.) এর মাজার জিয়ারত করতে, ফিরলেন লাশ হয়ে। শুক্রবার (৩ মে ) পটুয়াখালীর গলাচিপার সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামে নিহতদের বাড়িতে গিয়ে সন্তান হারানো মায়ের এমন আহাজারি দেখা যায়।এর আগে গত বুধবার (১ মে) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হরিতলা নামক এলাকায় ট্রাক-প্রাই ভেটকার মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের চারজন নিহত হন। নিহতরা হলেন- গলাচিপা সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের মৌজালী মৃধার মেজো ছেলে মো. জামাল হোসাইন (৪২), ছোট ছেলে এনামুল হক খোকন (৩৫), জামাল মৃধার স্ত্রী কামরুন নাহার (৩০) ও ছেলে কাওসার হোসাইন অনন্ত (১২)। নিহত জামাল হোসাইন ঢাকার সাভারে অবস্থিত পাইওনিয়ার গ্রুপের মেক্স কম ইন্টারন্যাশনাল বিডি লিমিটেডে ইলেকট্রিশিয়ান ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।ণ তার ছোট ভাই এনামুল হক খোকন একই এলাকার বেবিলন গ্রুপের অবনী ফ্যাশনে সিনিয়র সুইং অপারেটর পদে কর্মরত ছিলেন শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টায় প্রথমে নিহত তিন পুরুষ ও পরে সাড়ে ১০টায় কামরুন নাহারের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা পরিচালনা করেন বাড়ির মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. রবিউল হুসাইন। জানাযা শেষে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।হবিগঞ্জে নিহত পাঁচজনের চারজনই পটুয়াখালীর এক পরিবারের নিহত জামালের খালাতো ভাই ফেরদৌস বলেন, জামাল ভাই তার ছেলে কাওসারের মানত পালনে ৩০ এপ্রিল রাতে হজরত শাহজালাল (র.) এর মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সিলেটে জান। সঙ্গে ভাবি ও খোকন ভাইও ছিলেন। ১ মে সারাদিন তারা সিলেট থাকেন এবং রাতে সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। তাদের সঙ্গে রাত ১০টার পর সর্বশেষ কথা হয়। আমরা রাত ২টার দিকে দুর্ঘটনার খবর পাই।  নিহত জামাল ও খোকনের মামা মো. সোনা মিয়া বলেন, আমার ভাগিনা জামাল ও খোকন ঢাকার সাভারে চাকরি করতো। তারা খুবই ভদ্র ও শান্ত সভাবের ছিল। ওদের মৃত্যু আমার বোন স্বাভাবিকভাবে মানতে পারছে না। এই পরিবারে বর্তমানে তেমন কোনো উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। তাই আমরা সরকারের সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করছি৷গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল জানান, নিহতদের মরদেহ আজ সকালে গলাচিপা উপজেলায় এসে পৌঁছায়। ইতোমধ্যে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। নিহতদের পরিবারকে সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে।