২০০৯ সাল জীবীকার প্রয়োজনে

- নিউজ প্রকাশের সময় : ১১:২৬:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৬২ বার পড়া হয়েছে

২০০৯ সাল জীবীকার প্রয়োজনে
নেমে পড়লাম রংপাতা নামক বাস্বদুনিয়া।কাজ নিলাম হোটেলে,প্লেট পরিস্কার করার ।এত অল্প বয়সে তেমন কিছু জানিনা কিভাবে পরিস্কার করতে হয় কিন্তু হঠাৎ মনে হলো আমার মা কিভাবে সকালবেলা পরিস্কার করে ,সেভাবে শুরু করলাম । অনেক ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিস্কার করছি এমন সময় হোটেল মালিক এসে বলল জেট(ডিটারজেন্ট) কি তোর বাপ কিনে দেবে ? এত জেট দিস ক্যা ? মাত্র ৬ বছর বয়স কাঁদতে লাগলাম । মালিক বলল ; মাইয়্যা মাইনসের মতো কানদুস ক্যা ? কাইন্দা লাভ নাই ,পারলে কর না পারলে বাড়ি যা ! বাবা অসুস্থ আমাকে খাওয়াবে কে ? মায়ের ঔষধের টাকা আসবে কোথা থেকে ? আবার কাজ শুরু করলাম । হোটেলে আরেক ভাই আমার ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছে , সে আমাকে শিখিয়ে দিল। কিভাবে কম ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিস্কার করতে হয়। এক বালতি পানিতে অল্প ডিটারজেন্ট দিয়ে অনেক প্লেট এবং আবার ভালো পানিতে একবার । ৬ মাস পার হলো। দিনে ২ টাকার বেতন থেকে হলো ৩টাকা । কাজ বাড়ল ,আগে শুধু প্লেট পরিস্কার করতাম এখন খাবার টেবিলে পানি দেওয়ার সুযোগ পেলাম । কাজটা ভালো ছিল কিন্তু হোটেলটা ছিল অবৈধ জমিতে, গুড়িয়ে দেওয়া হলো । কাজ নেই, ভাত নেই, বেতন নেই। অন্য হোটেলে কাজ নিলাম বেতন ভালই পেলাম ১০টাকা দিন, অনেক খুশি । হয়ত বেতন বাড়ার জন্যই এ বিপদ এসেছিল সৃষ্টি কর্তা যা করেন সবকিছু মঙ্গলের জন্যই করেন ! ৬ বছর থেকে এখন আমার বয়স ১২ বছর । চাকরি বাদ দিয়ে শুরু করলাম বাদাম বিক্রি । পড়াশোনার ইচ্ছে থাকলেও যেতে পারছি না স্কুলে । সংসারের দায়িত্ব বাবা এবং আমার । বাবার চাউল, তরকারি আমার লবণ ,মরিচ,হলুদ । স্কুলে বাদাম বিক্রি করতাম আসল মহামারি , শুরু হলো লক ডাউন , স্কুল বন্দ ,আমার ব্যবসাও বন্দ। চরম হতাশ কী করে খাব ? শুরু করলাম ইটের ভাটায় ইট বহন করার । একদিন পায়ের উপরে ইট পড়ল, হাটতে আর পারি না । কিছুক্ষণ বসে থাকলাম , আবার শুরু হলো জীবন সংগ্রাম। চুড়ান্ত অর্থে পৃথিবীতে কেউ স্বাধীন নয় ,প্রত্যেকটা ব্যাক্তি অন্য ব্যাক্তির উপর নির্ভরশীল। মহামারিতে মানুষের টাকা পয়সার টান । নির্মান বিজনেসের বাজার ভাটা , শ্রমিকের মুল্য কম । মুল্যতো কম হবেই কারণ শ্রমিক বেশি ,কাজ কম , অর্থনীতির ভাষাই চাহিদার তুলনায় যোগান বেশি হলে পণ্যের দাম কম হবে । শ্রমিক তো পণ্যই, তাদের ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম হবে কেনো ? বছর ধরে লকডাউন ইটভাটা বন্দ আমার কাজও বন্দ । জীবন যেন আরেক উপন্যাস “অভাগা যেদিকে যায় সাগর শুকিয়ে যায়”। কিন্তু আমার জীবনের সাগর শুকালে তো চলবে না কারণ আমার বাবা , মা আছে । জীবনের প্রতি জন্ম হলো ঘৃণা ,বিদ্বেষ । এ কেমন জীবন ? যার কোন কুল কিনারা নেই । পানির মতো ছুটে চলা ,যেদিকে সুয়োগ পাবে সেদিকে চলে যাবে ।পৃথিবীতে বেঁচে থেকে লাব কী ,কিন্তু মরতেও তো টাকা লাগে । বিষ কিনতেও তো টাকা লাগবে, ফাঁসি দিবেন ঘড়ে ? সে ঘড়ও তো নেই । যে ঘড় থেকে চাঁদের আলো দেখা যায় ,সেটা ঘড়? যদিওবা মরেও যায় মা,বাবা ? মানুষ পৃথিবীতে বেঁচে থাকে অন্যর জন্য । যেমন আমি বেঁচে আছি বাবা-মায়ের জন্য, ঠিক বাবা-মাও হয়ত সন্তানের জন্য, কোন না কোন অবলম্বনের জন্য এভাবেই চলছে। পৃথিবী জীবন নামক বহতা নদীর কোন ঠাই নেই ।