তিতাসের বুকে গর্জে উঠলো মাঝিদের রঙ্গিন বৈঠা।

- নিউজ প্রকাশের সময় : ০৮:২২:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭৪ বার পড়া হয়েছে

তিতাসের বুকে গর্জে উঠলো মাঝিদের রঙ্গিন বৈঠা।
বছর ঘুরে আবারও ছলাৎ ছলাৎ শব্দে গর্জে উঠলো তিতাস তীরে বাহারি রঙিন মাঝির বৈঠা। উৎসব আর আমেজে মাতোয়ারা তিতাস তীরের পল্লী। পুরোটা বছর জুরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্রীড়াপ্রেমীরা। শত বছরের গর্জে ওঠা ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীতে ঐতিহ্যবাহী এই নৌকা বাইচ-২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতি (৭ সেপ্টেম্বর ) দুপুর ১২.৩০ থেকে জেলা শহরের শিমরাইলকান্দি গাঁও গেরাম বিনোদন পয়েন্ট হতে মেড্ডা সরকারি শিশু পরিবার পয়েন্ট পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানী লিঃ, দারাজ বাংলাদেশ ও ইউনিভার্সেল মেডিকেল সার্ভিসেস ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর সহযোগীতায় তিতাস নদীতে ঐতিহ্যবাহি নৌকা বাইচ ২০২৩ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসন ব্রাহ্মণবাড়িয়া কর্তৃক আয়োজিত “নৌকা বাইচ -২০২৩” অনুষ্ঠানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো: শাহগীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার, সিভিল সার্জন মোহাম্মদ একরামুল্লাহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৌরসভার মেয়র মিসেস নায়ার কবির, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোঃ হেলাল উদ্দিন, প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্তে সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিনসহ জেলা সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ।
প্রতিবছরই নৌকা বাইচ আয়োজনের কথা জানিয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা পুন ব্যক্ত করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য র.আ.ম ওবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। তিনি বলেন আমি ২০১১ সালে এমপি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব টি বন্ধ হয়ে থাকা নৌকা বাইচ আবার চালু করি। এটি একটি সময় মৌলবাধীদের কারনে এই প্রাণের উৎসবটি অনেক বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে বন্ধ ছিল। এখন সকলের সহযোগিতায় আমরা আবারো এই বাইচ চালু করতে পেরেছি। লাখো মানুষের উপস্থিতি প্রমান করে এই বাইচ সবায় চায়। বাঙালির প্রাণের এই উৎসব প্রতি বছর চালু রাখার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাব।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, গ্রাম বাংলার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এই আয়োজন। আমরা এই ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য সকলের সহযোগিতা চাই।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথির বক্তব্যে বক্তারা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে নৌকা বাইচের এই আয়োজন সবসময় চালু রাখার কথা পুনঃব্যক্ত করেন। নৌকা বাইচকে ঘিরে এলাকাবাসী ও সাধারণ মানুষের মনে উচ্ছ্বাস আর গণজাগরণ তৈরি হয়েছে। এমন সার্বজনীন ও উৎসবপূর্ণ আয়োজন করতে পেরে খুশি আয়োজকরা।
নৌকা বাইচে এবার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ১৫ টি নৌকা ৪ ভাগে ১ম পর্ব ও চূড়ান্ত পর্বে ৪টি নৌকা অংশগ্রহণ করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরস্থ মেড্ডার কালাগাজীর মাজার এলাকায় পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে নবীনগর উপজেলার নৌকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে সরাইল উপজেলার নৌকা এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করে আশুগঞ্জ উপজেলার নৌকা ।এতে বিজয়ীদের প্রধান অতিথি প্রথম স্থান অর্জনকারী দলকে ১ লাখ টাকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারীকে ৫০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় স্থান অর্জনকারীকে ৩০ হাজার টাকা এবং ট্রফি উপহার হিসেবে প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো: শাহগীর আলম আগত সকল সম্মানিত অতিথিবৃন্দ সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান ও ধন্যবাদ প্রদান করে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা ২০২৩ শেষ করেন।
নৌকা বাইচকে ঘিরে জেলা জুড়ে উৎসব ও আমেজ বিরাজ করছে। বাইচ দেখতে তিতাস নদীর দুই পাড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাসহ আশেপাশের কয়েক জেলার লক্ষাধিক উৎসুক নারী পুরুষ ভিড় করেন। নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা চলার সময় শিমরাইলকান্দি গাঁওগ্রাম এলাকা থেকে মেড্ডা শিশু পরিবার এলাকা পর্যন্ত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে ১০টি মোবাইল কোর্ট টিমসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ, আনসার ফায়ার সার্ভিস, বিএনসিসি, নৌ-পুলিশ, ডুবুরীদল, ফায়ার সার্ভিস ও মেডিকেল টিম কয়েকটি টীম নিয়োজিত ছিল। এছাড়াও ছিল ডুবুরীদল, ফায়ার সার্ভিস ও মেডিকেল টীম। নিরাপত্তার জন্য আকাশে উড়ানো হয় ড্রোন।