বিজয়নগর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে মানা হয়নি গঠনতন্ত্র, কমিটিতে বিবাহিত ও হত্যা মামলার আসামি

- নিউজ প্রকাশের সময় : ০২:৫৮:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪ ৫৩ বার পড়া হয়েছে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা ছাত্রলীগের অছাত্র, বিবাহিত, মামলার আসামী, মাদক ও নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত ব্যক্তিদের দিয়ে ১৫ সদস্যের আংশিক কমিটিতে ঘোষণা করা হয়েছে। এ কমিটি ঘোষণা পর পদত্যাগ থেকে শুরু করে সর্বত্র সমালোচনার জন্ম নিয়েছে। গত শনিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভনের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ১ বছরের জন্য নতুন আংশিক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। আগামী ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির গঠনের নির্দেশনাও রয়েছে এতে।এদিকে সদ্য ঘোষিত কমিটিতে সহসভাপতি শেখ এমরানুল ইসলাম তাৎক্ষণিক ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে নব কমিটি থেকে অব্যাহতির ঘোষণা দেন। অপরদিকে নতুন কমিটির আরেক সহসভাপতি সাদ্দাম হোসেনও কমিটির বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সদ্য ঘোষিত কমিটিতে পদ পাওয়া নেতৃবৃন্দরা হলেন সভাপতি পদে- হৃদয় আহমেদ, সহসভাপতি পদে- সাদ্দাম হোসেন, শেখ এমরানুল ইসলাম, সুহেল রানা, জাকারিয়া ভূইয়া, আব্দুল্লাহ ও শিপন ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক পদে- গোলাম রাব্বানী (রাব্বী), যুগ্মসাধারণ সম্পাদক পদে- হাবিব শাহিন, এইচ এম সুমন, আশরাফ চৌধুরী চাঁদ ও শাখাওয়াত হোসেন হৃদয়, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে- আসাদ ভূইয়া, গোলাম আবু নিশাদ ও সজীব ভূইয়া। সদ্য ঘোষিত বিজয়নগর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান পাওয়া ১৫ জন সদস্যের মধ্যে ৬ জনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে। তাদের ছাত্রত্ব এবং বয়স নিয়েও রয়েছে নানা রকম গুঞ্জন। এরই মধ্যে কমিটির সভাপতি হৃদয় আহমেদ সে একজন চাল ব্যবসায়ী। বর্তমানে উপজেলার চম্পকনগর বাজারে সে চাউলের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। সহসভাপতি সুহেল রানা একজন অছাত্র ও ব্যবসায়ী। উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের আউলিয়া বাজারে তার ইলেকট্রিক এর ব্যবসা রয়েছে। সে গত কয়েকবছর আগে পাওনা টাকার জন্য উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খাটিংগা গ্রামের ব্যবসায়ী বশির মিয়াকে ছুরি দিয়ে আঘাত করলে ঘটনা স্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল। সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী রাব্বী উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা ও সিঙ্গারবিল বাজারের তার মোবাইলের ব্যবসা রয়েছে। এ ছাড়াও বর্তমানে তার ছাত্র রাজনীতির বয়সও পেরিয়ে গেছে। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্ম ১৮ মে ১৯৯৪। সে অনুযায়ী তার বর্তমান বয়স ২৯ বছর ১১ মাস। কিন্তু ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫-এর ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, অনূর্ধ্ব ২৭ বছর বয়সী বাংলাদেশের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা বোর্ড স্বীকৃত যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র বা ছাত্রী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রাথমিক সদস্য হতে পারবেন। ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলনে বয়সসীমা এক বছর বাড়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হাবিব শাহিনের বিরুদ্ধেও অতীতে নারী সংক্রান্ত অশালীন ছবি ভাইরাল হয়ে ব্যাপক সমালোচনা জন্ম দিয়েছিল। তাছাড়া নিদারাবাদ বাজারে তার ইলেকট্রনিকস এর ব্যবসা রয়েছে। আরেক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এইচ এম সুমন সেও বিবাহিত। প্রায়ই ৮ মাস আগে উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামের আবুল বাশারের মেয়ে নাজমিন সুলতানা রিতুকে তিনি বিয়ে করেন। তারও ব্যবসা রয়েছে। সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদ ভূইয়া একটি হত্যা মামলার ২নম্বর আসামী। মামলার নথিপত্র ঘেটে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৩ মে উপজেলার হুমায়ূন কবীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মাদকবিরোধী সমাবেশ হয়। সমাবেশে গ্রামের ওপর দিয়ে মাদক পাচার করতে দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। মাদকবিরোধী ওই সভার আয়োজক ছিলেন আউলিয়া বাজারের ব্যবসায়ী আবু নাছির। সমাবেশের পর দিন ১২-১৪জন আবু নাছিরকে রড ও শাবল দিয়ে পেটান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবু নাছির মারা গেলে হত্যা মামলা হয়। ওই মামলার ২নং আসামী আসাদ ভূইয়া। কমিটিতে স্থান পাওয়া ৬ জনকে অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি দেওয়ায় এ কমিটি নিয়ে নানা রকম বির্তকের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা ছাত্র রাজনীতির অস্তিত্ব লড়াইয়ে টানাপড়ন পড়বে বলে মনে করেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। এদিকে বির্তকিত লোকদের দিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি প্রকাশ হওয়ার পর কমিটিতে থাকা সহসভাপতি শেখ এমরানুল ইসলাম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের বর্তমান অবস্থান জানান দিয়ে সদ্য কমিটির সহসভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি নেন। তিনি তার স্ট্যাটাসে বলেন, ছাত্রলীগের আর্দশ না রেখে ব্যবসায়িক ও বিবাহিত দিয়ে কমিটি দেওয়ার কারণে বিজয়নগর উপজেলা ছাত্রলীগ থেকে আমি শেখ এমরানুল ইসলাম অব্যাহতি নিলাম।অপর দিকে কমিটির সহসভাপতি সাদ্দাম হোসেন তার ফেসবুক স্ট্যাটসে লিখেন, রাজনীতিতে বাটপার ও মীরজাফরদের কদর বেশি। বিবাহিত, ব্যবসায়িক, অছাত্র, (প্রকাশের অযোগ্য শব্দ) মিলে বিজয়নগর উপজেলা ছাত্রলীগ। সদ্য বিলুপ্ত আহবায়ক কমিটির সদস্য জাহিদ আহমেদ জয়ও আক্ষেপ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এ বিষয়ে সদ্য পদত্যাগকারী শেখ এমরানুল ইসলাম বলেন, ‘অছাত্র, ব্যবসায়ী, নারী কেলেঙ্কারি, হত্যা মামলার আসামি ও বিবাহিতদের দিয়ে এই কমিটি দিয়েছে। নবগঠিত কমিটির সভাপতি চাল ব্যবসায়ী ও সাধারণ সম্পাদক মোবাইল ব্যবসায়ী। তাই কমিটি থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল বলেন, কেউ যদি বিবাহিত হন আর তার সঠিক প্রমাণ কাবিননামা কেউ উপস্থাপন করতে পারেন তাহলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিব। আর পৈতৃকভাবে যদি কেউ তার ব্যবসা পরিচালনা করেন তাহলে তো সমস্যা নেই। কারণ ছাত্রত্ব রেখে তো সে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। আর মামলার আসামী যে তার বিরুদ্ধে যদি চার্জসীট হয় তাহলে আমরা তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিব। সোহেল রানা বর্তমানে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আছে। বয়সের বিষয়টি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ শিথিল করেছে।